রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার আশ্বাসে খুব একটা ভরসা পাচ্ছি না
ওয়ালিউর রাহমান
অং সান সু চির দপ্তর বিষয় মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে যে আশ্বাস দিয়েছেন তাতে আমি খুব একটা ভরসা পাচ্ছি না এ কারণে যে, এরকম প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি ও লিখিত চুক্তি হয়েছিল ১৯৭৮ সালেও। ১৯৯২ সালেও চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু তারা একবারও কথা রাখেনি। বিগত ৪০ বছর তাদের যে ব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি তাতে করে ভরসা পাওয়া যায় না। এখন আবারও তারা এখানে এসে প্রতিজ্ঞা করে গেল, একটা ‘জয়েন্ট ওয়ার্কি গ্রুপ’ গঠনে ঐক্যমত পোষণ করল। আমাদের এখান থেকে কয়েকজন যাবেন ওখানে, ওখানে কয়েকজন সিলেক্ট করে বসবেন, আলোচনা করবেন। দুই পক্ষ বসে, ২ অক্টোবর ঢাকায় যে এগ্রিমেন্ট বা চুক্তিটা হলো তার ভিত্তিতে বসে একটা সমাধান তারা বের করবে। ওখানে আমাদের পক্ষ থেকে যে কমিটি মেম্বার থাকবেন তারা আলোচনা করে সবকিছু ঠিকঠাক করবেন তারা। এখানে সমস্যা নেই, সমস্যা বা জিজ্ঞাসা হলোÑ মিয়ানমার কী আসলেই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখবে?
আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটা মোকাবিলা, সমাধানে যদি যেকোনো চুক্তি আমরা করি সেখানে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ চাই। কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। প্রধানমন্ত্রী আরও তিনটি প্রস্তাব রেখেছেন। সবকিছু প্রস্তাবের বাস্তবায়ন করা দরকার। কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে তা কি তারা বাস্তবায়ন করবে? আমার সন্দেহ আছে। এটা হলো আমার কূটনৈতিক সন্দেহ বা সংশয়। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া ঠিকই আছে, তবে আমি চাচ্ছি যে, ওয়ার্কিং গ্রুপ যখন বসবে তখন তারা যেন সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো সামনে নিয়ে আসেন। একইভাবে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনও সামনে নিয়ে আসবেন। এ দুটি প্রস্তাব এবং প্রতিবেদন যদি সামনে নিয়ে আসা হয় তাহলেই আমরা জাতিসংঘের অংশগ্রহণ পেয়েছি যাচ্ছি। জাতিসংঘের অংশগ্রহণ কেন দরকার এই সংকট নিরসেনর ক্ষেত্রে? কারণ টার্মস অব রেফারেন্সের কথা বারবার বলছি আমি। ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে তা তারা বের করবেন।
সু চির দপ্তর বিষয়ক মন্ত্রীর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আশ্বাসটি কেবল বৈশ্বিক চাপে পড়েই মিয়ানমার দিয়েছে এটা যারা বলছেন তাদের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। একমত নই এ কারণে যে, মিয়ানমারের উপর বৈশ্বিক চাপ অবশ্যই আছে। বৈশ্বিক চাপের কারণেই মিয়ানমার শেষ পর্যন্ত আলোচনা বা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। তবে এটাও তো ঠিক সু চি রাজি হয়েছে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে। এখানে আসলে দুই দেশের সম্পর্কের উপর নির্ভর করবে কতটুকু অনেস্টটি এবং সিনসিয়ারিটি আছে এই প্রস্তাবে। আমাদের দুটিই আছে, প্রশ্ন মিয়ানমারের কী সেই সিনসিয়ারিটি আছে? সিনসিয়ারিটি নির্ভর করবে সম্পূর্ণ কারা এই ওয়ার্কিং গ্রুপে থাকবেন তাদের উপর। তারা কাদের কাছ থেকে ব্রিফিং নেবেন। আমি বলব না যে, তারা রোহিঙ্গাদের নেওয়ার জন্য শুধুই আশ্বাসই দিয়েছে, বাস্তবায়ন হবে না। তবে তাদেরকে চাপের মধ্যে রাখতে হবে। এজন্যই আমি আবারও বলছিÑ আমাদেরকে চীন, রাশিয়া, ভারতকে সঙ্গে রাখতে হবে। তাদেরকে পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সবার সঙ্গে একটা উচ্চপর্যায়ের মিটিং করা দরকার। সিনিয়র মন্ত্রীরা সেখানে গেলেন। এই কাজগুলো করলে আমরা অন্তত একটা স্বস্তির জায়গা থাকতে পারব। জাতিসংঘ ও আনান কমিশনের প্রতিবেদন যদি মিয়ানমার গ্রহণ করে সম্পূর্ণভাবে তাহলেও সেখানে জাতিসংঘ সেখানে থাকছে। সেটাই হবে আমাদের শেষ চেষ্টা।
পরিচিতি: সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক/সম্পাদনা: আশিক রহমান