খেলাপি ঋণ কমলেও মন্দঋণ বাড়ছে
জাফর আহমদ : বিশেষ সুবিধায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার পরও ব্যাংকিং খাতে অনাদায় যোগ্য (কু-ঋণ) খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশই মন্দমানের বা কু-ঋণ। এর পরিমাণ সাড়ে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাব গত বছরের ডিসেম্বরের। এক বছর আগে ২০১৪ সাল শেষে এ খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকার মন্দঋণ ছিল। এক বছরের ব্যবধানে মন্দঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। ফিন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৫ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার ফিন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি রিপোর্ট ২০১৫-এর মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় ডেপুটি গভর্নর, চেঞ্জ ম্যানেজম্যান্ট উপদেষ্টা, সিনিয়র উপদেষ্টা, নির্বাহী পরিচালক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৫ সালে বিশেষ সুবিধায় বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা হয়েছে। তারপরও এ খাতে মন্দমানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর জন্য ব্যাংকগুলোর ঋণ অনুমোদনে স্বচ্ছতা ও দক্ষতার অভাব, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ অনুমোদন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সর্বোত্তম পরিপালন না করাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে খেলাপিঋণ পুনঃতফসিল বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল হয়েছে ঝুঁকিভিত্তিক ঋণগুলো। এই হার ২৮ শতাংশ। তবে এ সময়ে মোট ঋণ বিতরণ হওয়া ঋণের সাড়ে ৪ শতাংশ এবং অশ্রেণীকৃত ঋণের ৫ শতাংশ পুনঃতফসিল হয়েছে। ২০১৪ সালে বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, অশ্রেণীকৃত ঋণের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও ঝুঁকিভিত্তিক ঋণের ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ পুনঃতফসিল সুবিধায় নিয়মিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে প্রথমবার বিশেষ সুবিধায় বড় ঋণগ্রহীতাদের (৫০০ কোটি টাকার বেশি) খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়েছে। এর মধ্যেও ঝুঁকিভিত্তিক ঋণের অংশ বেশি ছিল। যার হার ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ও অশ্রেণীকৃত ঋণের ৩ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ৫৬টি ব্যাংকের ২৩টি ব্যাংক শীর্ষঋণ গ্রহীতাদের পুনর্গঠন সুবিধা দেয়। এর মধ্যে ১৭টি বেসরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি ও ১টি বিদেশি ব্যাংক। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুনর্গঠন সুবিধা দিয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দিয়েছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের ৪৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণই রয়েছে ৫ ব্যাংকে। ৬৪ শতাংশ রয়েছে ১০টি ব্যাংকে। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংক, বেসরকারি ৩ ব্যাংক, বিশেষায়িত ১ ব্যাংক ও বিদেশি ১ ব্যাংক। এতে দেখা যায়, সার্বিক ব্যাংকিং খাতে সম্পদের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। আর ১০টি ব্যাংকের অনুকূলে এই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরিমাণ ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ। এই ১০ ব্যাংকের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও ৬টি বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি