রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস শুধু সময় ক্ষেপন
রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিপীড়ন এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপরে সর্বশেষ আগস্টের শেষ সপ্তাহে দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত অভিযানে সারা বিশ্ব গণহত্যা এবং অগ্নি সংযোগের এক ভয়াবহতা দেখতে পেল। যদিও দেশটির সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যাকে অস্বীকার করে আসছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কার্যালয়ের মন্ত্রী ঢাকা সফরে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নিপীড়ন বন্ধের চেষ্টা এবং প্রত্যাবর্তনের আশ্বাস দিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দেশটির মন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন সেটা সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজি। কারণ দেশের এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এখনো দেখা যাচ্ছে, দেশটি মুসলিম নিষিদ্ধকরণের জন্য জায়গায় জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলো আবার অন্যদিকে রাখাইন পল্লীতে এখনো সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে এবং সেখানে আরও জোরেসোরে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এমনকি তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আরও অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আশ্বাস দেওয়ার পর পরই তাদের যদি এ ধরনের গণহত্যা এবং অমানবিকতার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, তাহলে সেখানে তো আশ্বাসের সামান্যতম গুরুত্ব দেখি না বা আছে বলে আমি মনে করি না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের যে আশ্বাস এটা শুধু সময় ক্ষেপনের জন্য করেছে বলে আমি মনে করি। রাখাইনের গ্রামাঞ্চলে এখনো যারা অবশিষ্ট আছেন, তাদের প্রচ- খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে এবং সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি মুসলিমমুক্ত এলাকা উল্লেখ করে পথে পথে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখনো যারা বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে, তাদের অনেকেই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হচ্ছে। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের জন্য সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন থেকে ঘন ঘন মাইকিং করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এই চিত্র হলো তাদের আশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা এই আশ্বাটা দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের অমানবিক এবং গণহত্যাকে আরও প্রলম্বিত করার জন্য। এছাড়াও যৌথ আলোচনার একটা ভাঁওতাবাজি ঝুলিয়ে দিয়ে এই ফাঁকে তারা রোহিঙ্গাদের এলাকাটাকে আরও জাতিগত নিধন করবে। আজকে রোহিঙ্গাদের যে অমানবিক এবং গণহত্যার শিকার হতে হয়েছে তার জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বা আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এই ফ্রেমে এখানে জড়িত করা যায় না। কিন্তু এই ফ্রেমের বাইরে আমরা ইচ্ছা করলে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যুক্ত করতে পারি। সেটা বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার মাত্রার ওপর নির্ভর করে। সরকার এখানে কী ধরনের তৎপরতা চালাবে তার ওপর। কারণ, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। ভারতের সঙ্গে আমাদের যৌথ নদী কমিশন আছে। এমনকি তাদের সঙ্গে বিজিবি এবং বিসিএফের এক দুই মাস পর পর যৌথ বৈঠক হচ্ছে। তারপরও তো একের পর এক বাংলাদেশিরা নিহত হচ্ছে। যৌথ নদী কমিশন তো আজকের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতোই। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয় না আজকে বহু দিন ধরে। আমরা তিস্তা নদীর ন্যায্য পানি পাচ্ছি না। পদ্মা নদীর পানি আমরা চুক্তি অনুযায়ী পাচ্ছি না। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের অভিজ্ঞতা খারাপ। সেখানে আবার তার চেয়েও বেশি অমানবিতার একটি কাজের ব্যাপারে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি মৃতপ্রায় রোগীকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ানোর মতো আরকি। এটা হলো মুমূর্ষু রোগীকে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর মতো অবস্থা।
পরিচিতি: যুগ্ম-মহাসচিব, বিএনপি
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ