বিশেষ সাক্ষাৎকারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শেখ হাসিনার দিকে সবাই আঙুল তুলেন কিন্তু তিনি কী একাই সব কাজ করবেন?
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক বেশি প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়া উচিত ছিল
আশিক রহমান : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ মিয়ানমারের একটা লোক দেখানো প্রয়াস। এটার মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে, আমরা তো সংকট সমাধানের জন্য আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। লোক পাঠিয়েছিলাম। বাংলাদেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিছুদিন পর যখন রোহিঙ্গারা যখন আর আসবে না, আসা বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তারা আমাদের দেশের একটা অংশ হয়ে যাবে। মিয়ানমার তখন এটা দেখিয়ে বলবে যে, আমরা চেষ্টা করেছিলাম, বাংলাদেশ কিছু করেনি, আমরা কী করব? তখন দুনিয়ার সব দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে যাবে, বলবেÑ আপনারা এ সমস্যার সমাধান করুন। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক বেশি প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়া উচিত ছিলÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, তবে সময় এখনো শেষ হয়নি। মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়, তাই বাংলাদেশকে এখানে একটা শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। তাদের বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে। বাধ্য করার পেছনে আন্তর্জাতিক মহলকেও যুক্ত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পক্ষে। নিকি হিলি, যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘের প্রতিনিধি, তিনি অনেক শক্ত ভাষায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলেছেন। আমাদের রাষ্ট্রদূত, বড় কোনো মন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত নিকি হিলির সঙ্গে বৈঠক করে তার আন্তরিকতার বিষয়টি পরিমাপ করে তাকে পার্টনার তৈরি করা। পার্টনারশিপ না হলে একা একা এই সংকট মোকাবিলা করতে পারব না আমরা। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ যারা রোহিঙ্গাদের পক্ষে তাদের তাদেরও সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। এ সংকটে আমাদের সেনাবাহিনীও এখানে জড়িত হবে না, কোনো দেশের সঙ্গে অশান্তি হোক আমরাও তা চাইব না। আন্তর্জাতিক মহলও তা সমর্থন দিবে না। শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া ছাড়া আমাদের সামনে কোনো উপায় নেই। কারণ যেহেতু আমাদের একটা সুনাম হয়ে গেছে, যেহেতু সারা পৃথিবীতে অং সান সুচির একটা বদনাম হয়ে গেছে, তাই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, সংকট মোকাবিলায় আমাদের একটা শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এই অবস্থান হবে মিয়ানমারকে বুঝিয়ে বলা যে, রোহিঙ্গাদের যদি আপনারা ফেরত না নেন তাহলে তার খেসারত দিতে হবে। এ নিয়ে আমরা অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন করে যাব। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেÑ যেসব বড় বড় দেশ আমাদের সমর্থন দিচ্ছে বা মৃদু সমর্থন জানাচ্ছেÑ এই সমর্থনটা শক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে। লবিং করে যেতে হবে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে একটা টাইমফ্রেম বেধে দিতে হবে যে, ওমুক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। কফি আনান রিপোর্টটা ভিত্তি করতে হবে। সঙ্গে তাকেও রাখতে হবে। তিনিও যেন এ নিয়ে কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস, তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় শুধু একটা চিঠি দিয়েছেন, তার তো উচিত ছিল সব দেশ ঘুরে ঘুরে সব রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা। রোহিঙ্গা প্রশ্নে তিনি একটা প্রস্তাব দিতেন পারতেন যে, আমার সঙ্গে বাংলাদেশের সিভিল সমাজের কিছু মানুষ আসুন, আমরা সমস্ত পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা করি। আমি এমন মানুষকেও জানি যারা এ বিষয়ে নিজের পয়সা খরচ করেও যেতে রাজি ছিল। এটা হয়নি। আমি তাকে দোষ দিচ্ছি না। তিনি তার জায়গা থেকে যথেষ্ট করেছেন। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় চিঠি লিখেছেন। সেটা যথেষ্ট নয়। তিনি যদি ওই সময় ওখানে থাকতেন তাহলে অনেক বেশি ইফেক্টিভ হতো। ড. ইউনূস, ড. কামাল হোসেনের মতো ২০-২৫ জন মানুষ, যাদের আন্তর্জাতিকভাবে চিনে তারা যদি ওখানে থাকতেন তাহলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষ এবং মিডিয়া তাদের সামনে আনত, শুনত। তাদের তো উচিত ছিল প্রো-অ্যাক্টিভ হওয়া। শেখ হাসিনার দিকে সবাই আঙুল তুলেন, কিন্তু তিনি কী একাই সব কাজ করবেন? সিভিল সমাজের নেতৃত্ব দিবেন? যে এনজিওগুলো রয়েছে তারা কী কাজ করছে? রোহিঙ্গাদের নিয়ে চাঁদাবাজিও তো হচ্ছে। উনি যখন ডাকেন, একটা চাপ সৃষ্টি করেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা সব করা সম্ভব নয়। সবাইকেই এ বিষয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন রয়েছেন, তিনি কি একটা প্রেসকনফারেন্স করে বলেছেন বিশ্বকে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আপনারা কিছু করুন। তিনি কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার অনুমতি চেয়েছেন যে, আমি রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার সঙ্গে কথা বলব? এরশাদ সাহেব অনেক লম্বা লম্বা কথা বলেন, তাকে মধ্যপ্রাচ্যের সবাই চিনে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছেন এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য? আমরা নিজেরা কিছু না করে সবাই প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করি, এটা কেমন কথা? ছোট একটা ভূমিকাতে মালেশিয়ার একটা পত্রিকার সাক্ষাৎকারে তীব্র ভাষায় রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতিবাদ করেছি। সামান্য মানুষ হয়েও যদি আমি এ কাজটি করতে পারি তাহলে বড় বড় মানুষ যারা তারা কী করছেন? এমন প্রশ্নও তুলেন এই বিশ্লেষক।