মুশফিক, টেস্ট দলের পারফরমেন্স এবং কিছু প্রশ্ন
অঘোর ম-ল
দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে সেই ইনিংস ব্যবধানে হারের বৃত্তেই ঘুরপাক খেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ২০০২ সালে প্রথম টেস্ট খেলতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখন বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হারে। এরপর ২০০৮ সালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টানা চারটি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর পচেফ্স্ট্রুমে ইনিংস ব্যবধান এড়াতে পারলেও ৩৩৩ রানে হেরেছে। সেটাও ইনিংস ব্যবধানের হার থেকে কম লজ্জার ছিল না। আশা ছিল ব্লুমফন্টেইনে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়াতে পারল না মুশফিক বাহিনী, বরং সেই ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জা দিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাংলাদেশের হার ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এলো দুটো বিষয়। প্রথমটা হলো, দুবার টস জিতে কেন বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিল্ডিং নিলেন? টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটা মুশফিকের একারÑ সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ সিদ্ধান্তটা অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টের। টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পেছনে কী কী যুক্তি আছে সেটা টিম ম্যানেজম্যান্ট ভালো বলতে পারবে। তবে এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট বাউন্সিং; এ ধারণা নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের। কিন্তু সেটাও হিতে বিপরীত হলো। এ কারণে ওই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাটিং করলেন তাতে আগে ব্যাটিং করার আক্ষেপটা মুশফিককেও মনে হয় কষ্ট দেয়। বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ২য় টেস্টে ভালো কিছু করার সুযোগ এসেছিলÑ দল যেহেতু টসে জিতেছিল। কিন্তু দিনশেষে মুশফিকের বক্তব্য, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং এবং সব মিলিয়ে মনে হয় ২য় টেস্টে টসে না জিতলেই মনে হয় ভালো হতো মুশফিকের। তাহলে হয়তো আঙুলটা মুশফিকের দিকে আসত নাÑ কেন মুশফিক টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন না? আবারও বলতে হয়, ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তটা তিনি একা নেননি। আবার বাংলাদেশ দলে ব্যাটিং দুর্বলতাটা এ সিরিজে আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠল। সেখানে শুধু ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাটা ফুটে উঠলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু বোলাররাও দেখালেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সিং উইকেটে লাইন-লেন্থই যেন খুঁজে পেলেন না। এবং যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা তাদের ডমিনেট করলেন, সেটাও বাংলাদেশ দলের জন্য সুখকর কিছু নয়। হয়তো বা তামিম এবং সাকিবের অনুপস্থিতি ব্যাটিং বিপর্যযের আরেকটা কারণ হতে পারে। কিন্তু তাদের অনুপস্থিতিতে যারা সুযোগ পেয়েছিল তারাও সে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি। তামিমের জায়গায় খেলে সৌম্য সরকার আবারও প্রমাণ করলেন, তাকে নিয়ে সমালোচনা যে নিছক সমালোচনার জন্য নয়। তিনিও কিন্তু ব্যর্থ হলেন। ইমরুল কায়েস শুরু করে দুই টেস্টের কোথাও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না। এটা একটা বড় ব্যর্থতা ইমরুলের জন্য। মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু মুশফিক কি আসলেই মাঠে অধিনায়কত্ব করলেন বা করার সুযোগ পেলেন? নাকি টসে নামাই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের একমাত্র কাজ? মুশফিকের পরিবর্তে লিটন দাশ কিপিং করলেন। তিনি কিপিং ও ব্যাটিংয়ে খুব খারাপ করেননি। কিন্তু গ্লাভস ছাড়া মুশফিক কোথায় ফিল্ডিং করবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যদিও বোর্ড সভাপতি বললেন, মুশফিক কোথায় ফিল্ডিংয়ে দাঁড়াবে সেটা তার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোনো অধিনায়ক টেস্টে লং এ দাঁড়াবে সেটাও অবিশ্বাস্য। এ সিদ্ধান্তটা ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক বলে মনে হয় না।
মুশফিক যখন শুধু ফিল্ডিং বা শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন তখনই তার আত্মবিশ্বাসের কোথায় যেন একটু চিড় ধরা পড়ে। সেই জায়গা থেকে মুশফিক কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন বা নিজেকে মেলে ধরবেন সেটা একটা প্রশ্ন। তারপরও মুশফিক বাংলাদেশ দলের একজন পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। টেকনিক্যাল দিক থেকে অন্যদের চেয়ে তিনি আলাদা। বড় ইনিংস খেলার ক্ষমতা তার আছে, অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে কিপিং করেও তিনি ডাবল হান্ড্রেড করে এসেছেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে। বড় বড় ইনিংস খেলা তার পক্ষে সম্ভব। কেন তাকে শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানোর চিন্তা, সে প্রশ্ন রয়েই গেল।
পরিচিতি: ক্রীড়া বিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসেন