সাক্ষাৎকারে প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে হাসিনা ও ভারতের দু’মুখো নীতি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন : তাসকিনা ইয়াসমিন
২৫স্ট সন্ত্রাসের পর আরাকান থেকে রোহিঙ্গারা চলে আসতে থাকলে আমরা বলেছিলাম, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের আদিবাসী। রাজনৈতিক কারণে তাদের এই সমস্যার সৃষ্টি তাই রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান হতে হবে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার সামরিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারও দায়িত্বহীনভাবে তাদের সামরিক সাহায্য দেয়ার পক্ষে মত দেয় । আমরা বাংলাদেশ সরকারের শান্তি বাহিনীর সাথে অভিজ্ঞতার আলোকে মিয়ানমার সরকারকে সমস্যাটির রাজনৈতিক সমাধানে সাহায্য করতে বলি, সামরিকভাবে নয়, আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগ ও মধ্যস্ততায় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার প্রস্তাব করি। সম্প্রতি আমাদের অর্থনীতির সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে সর্বজন বিপ্লবী দলের আহ্বায়ক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া ও ভারত মিয়ানমার সরকারের পক্ষে দাঁড়ালে শেখ হাসিনা সরকার নিশ্চুপ থাকে। বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা দেশে ও বাইরে সমালোচিত হলে এবং রোহিঙ্গা সমস্যা মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অবস্থান থেকে সরে এসে ১২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ভিটে মাটি ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। হাসিনা এখন বলছেন, ‘আমরা ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে ৭ লক্ষ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারব।’ অত্যন্ত হঠকারী এই কথা। তাহলে মিয়ানমার সকল রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে খেদিয়ে দেবে, এই সমস্যার আর সমাধান হবে না। ভারতও এই সুযোগে হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে বলছে, বাঙালিরাই ভারতে অনুপ্রবেশকারী। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা সামাজিক, প্রিন্ট ও টেলিভিশন মিডিয়ায় রোহিঙ্গাদের ছবি দেখছি। নারী, শিশু, বুড়োই বেশী। জাতিগত দাঙ্গার শিকার হয়ে আরাকান থেকে তারা পালিয়ে আসছে। যুবকরা কম। অনেকে নাকি পরিবারের সবাইকে সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে আবার ফিরে গেছে। তারা আরাকানে থেকে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নিয়ে লড়বে। লক্ষণীয় যে, তাদের মুখে যেসব আতংকের গল্প শোনা যাচ্ছে, তাদের চেহারায় সেই আতংক নেই। লক্ষনীয় আরও অনেক কিছু আছে। এরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে পায়ে হেঁটে এসেছে। চেহারায় সেই ক্লান্তি নেই। এরা অধিকাংশই দেখতে কালো, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার বাঙ্গালীদের মত। ভাষাও তাদের প্রায় এক। বার্মার শাসকরা তাদেরকে বাঙালি, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীই বলে। তাই তারা তাদেরকে নাগরিকত্ব না দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা তাদেরকে আপন বলে ভাবতে পারছি না, বরং কারো কাছে বিজাতীয়, কারো কাছে ক্রিমিনাল, দূর দূর ভাব। আমার কাছে এদেরকে এক বিস্ময়কর জাতি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সারা বিশ্বে এরা ছড়িয়ে আছে। আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া কোথায় নেই? এরা বিভিন্ন দেশের উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী, এদের একটাই জাত। এরা প্রতারণাপূর্ণ অর্থনীতির জালে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে, তারপর উন্নয়নের জোয়ারে ভিটেমাটি হারিয়ে পড়েছে পথে, সড়ক বা বাঁধে, বা রেলের ধারে। তারপর এরাই যুগ যুগ ধরে যাযাবরের মত ভেসে বেড়াচ্ছে এক ঠাঁই থেকে অন্য ঠাঁইতে। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের পর থেকে বিশ্বসমাজে মানবতা একটা অনেক বড় বুলি, আজকের একবিংশ শতাব্দীতেও। তিনি আরও বলেন, এই মানবতার বুলিতে বাক স্বাধীনতা, নারীর স্বাধীনতা, খয়রাতি অনুদান, ইত্যাদি আছে কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার কথা নেই। কর্পোরেট অর্থনীতির সামাজিক দায়িত্ব নামের প্রতারণাপূর্ণ বাজেটে বুদ্ধিজীবীরা কেনা হয়ে যায়, প্রচারে সব ঢাকা পড়ে। দুর্গতদের সাহায্য দেয়া হয় সাজানো ফটোসেশনের জন্যে। আমরা অবিলম্বে জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় সীমানা সংলগ্ন মিয়ানমারের ভূমিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলি সরিয়ে নিতে বলছি। মিয়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিচ্ছে। ডাহা মিথ্যা। রোহিংগ্যারা বাড়ি ছেড়ে আসলে মিয়ানমার সেনার ছত্রছায়ায় সেগুলিতে আগুন দেয়া হচ্ছে। আগুন যেই দিক, মিয়ানমার এভাবে স্বীকার করছে ওরা তাদের লোক। অতএব যতদিন শান্তি ফিরে না আসে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমানার কাছে বিশ্ব সংস্থা গুলির তত্বাবধানে মিয়ানমারের মাটিতেই অবস্থান করুক। এভাবেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্মূল নীতি ব্যর্থ হবে ও সেখানে শান্তি ফিরে আসবে।
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ