প্রধান বিচারপতি আইনের ঊর্ধ্বে নন, একমাত্র রাষ্ট্রপতি আইনের ঊর্ধ্বে : বিচারপতি শামসুদ্দীন
জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের আনীত অভিযোগ প্রমানীত হলে তাকে সাজা পেতে হবে, জেল হবে। কারণ তিনি আইনের উর্দ্ধে নয়। একমাত্র রাষ্ট্রপতি আইনের উর্দ্ধে। সোমবার সুপ্রিমকোর্টেও সাবেক বিচারপতি শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক একান্ত সাক্ষাৎকারে এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
শামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আজ নতুন কিছু নয়। এর আগেও ২০০৭ সালে দূর্নীতির অভিযোগে তাকেসহ তিন জন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে ডাকা হয়েছিলো। এই সময় তাদেরকে অনেক বড় বড় দূর্নীতির প্রমানসহ ফাইল দেখানো হয়েছিলো। তাদেরকে বলা হয়েছিলো, আপনারা হয় পদত্যাগ করুন, নয়ত বিচারের মুখোমুখি হন। সিন্হা বাবু তখন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন তৎক্ষনিকই পদত্যাগ করে চলে আসেন। কিন্তু সিনহা বাবু রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে দুই দিনের সময় নেন এবং বলেন, তিনি তাঁর মায়ের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাকে যেন দুই দিনের সময় দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১/১১ সময় সিন্হা সাহেব একজন ক্ষমতাসীন আইনজীবীকে ধরেন। সেই ক্ষমতাবান আইনজীবীই তখন সিনহা বাবুকে বাঁচিয়ে দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই বিচারক বলেন, এত দিন প্রমানের অভাবে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেননি। আর মুখ খুললেই তিনি আদালত অবমাননার দায়ে সাজা দিতেন। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, একটি মার্ডার মামলার ব্যাপারেও তার হাত ছিল। অন্যান্য বহু মামলায় সিনহা বাবু দূর্নীতির মাধ্যমে রায় দিয়েছেন। সর্বশেষ আমরা দেখতে পেলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে, তাঁর ব্যাংক একাউন্টে চার কোটি টাকার একটি পে অর্ডার জমা হয়েছে। এবং তিনি তা তুলে নিয়েছেন। তার কোন হিসাব নাই। যা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখানো হলো।
শামছুদ্দিন মানিক বলেন, আমরা একটি বেসরকারী টেলিভিশনে দেখতে পেলাম প্রধান বিচারপতি টেক্স রিটার্ণ এ ভূয়া দলিলপত্র দেখিয়েছেন। এবং সেখানে উনি প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছেন। উদাহারণ স্বরুপ তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির ভাইয়ের নামে কেনা বাড়ি নিজের নামে দেখিয়েছেন এবং বাড়িটি নিজে ৯ তলা ভবন তৈরী করেছেন। কোন ডেভলাপারকে দেননি। অথচ তিনি দেখিয়েছেন বাড়িটি ছয় তলা। এই ৯ তলা ভবন তৈরী করতে যে টাকা লাগে তার টেক্সে তা উল্লেখ করেননি। তার তিন কাটা জমি আছে যার হিসাবও টেক্স রিটার্নে দেখাননি। এই রকমভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর তিনি এসব কাজ করাতেন রঞ্জিত সাহা নামের একজন পার্টনারকে দিয়ে। রঞ্জিতের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সম্প্রতি একটি কথা উঠলো সিনহা বাবু একটি মামলায় ৫০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এবং এই মামলায় তার সঙ্গী হিসাবে ছিলো এই রঞ্জিত সাহা। এই ঘুষের কথা উঠার সাথে সাথেই রাতের অন্ধকারে রঞ্জিত সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেলেন। রঞ্জিত এখনো সিঙ্গাপুরেই রয়েছে। আরো একটি ব্যাক্তি সিনহা বাবুর দূর্নীতির সাথে জড়িত। তিনি হলেন অনিরুদ্ধ কুমার রায়। আর এই অনিরুদ্ধই সিনহা বাবুকে রাজাকার সাকা চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে বসার ব্যবস্থা করে দেন। সম্প্রতি যখন প্রধান বিচারপতির সকল দূর্নীতির কথা প্রকাশ পায় তখন অনিরুদ্ধ আতœগোপন করেছে বলে সকলের ধারণা। এই অনিরুদ্ধের কাছে সিনহা বাবুর সকল অপকর্মের, দূর্নীতির প্রমানাদি রয়েছে। তাই সে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির এই দুই সহযোগীর কাছে বহু তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে সকল দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তার অনেকগুলোই অনিরুদ্ধের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত