বিমানবন্দর থেকে ফিরোজা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মানবপ্রাচীর ৯৩ দিন পর আজ দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া
শাহানুজ্জামান টিটু : চিকিৎসার জন্য টানা ৯৩দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে সুস্থ হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ দেশে ফিরছেন। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তার ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। এরপর তিনি সোজা চলে যাবেন গুলশান-২ ফিরোজায় নিজ বাসভবনে। বিমানবন্দরে তাকে সর্ম্বধনা দেবেন দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ নেতাকর্মীরা। যদিও এই সর্ম্বধনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তবে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রীকে সম্বর্ধনা জানাতে বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার বাসভবন পর্যন্ত রাস্তার পাশ দিয়ে গড়ে তুলবে মানবপ্রাচীর। এরআগে বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন তিনি।
এদিকে দলের প্রধানের দেশে ফেরার নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। সরকার বলছেন, উনি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছেন। উনি আর আসবেন না। আমি বলতে চাই, উনি দেশ, গণতন্ত্র ও জনগণের নেত্রী। আর পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস তো আওয়ামী লীগের নেত্রীর। তাদের অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও ধোঁয়াশাকে বিপন্ন করে আজ বেগম জিয়া তার জনগণের কাছে ফিরে আসছেন। তিনি বলেন, বেগম জিয়া বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আপনারা ভাবছেন তার মনোবলকে দুর্বল করবেন। এটা ভেবে আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে লন্ডনে ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন। মুলত চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে যাওয়্রা কথা প্রচার করা হলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই হচ্ছে খালেদা জিয়ার শেষ লন্ডন সফর। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে এই সফরেই তারেক রহমানের সাথে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন এ দুই ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে দুই শীর্ষনেতার মধ্যে। এছাড়া নিবার্চনকালীন সময়ে সহায়ক সরকারের রূপরেখা, সরকার বিরোধী আন্দোলন, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে পদায়ন ও দলের সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এবং সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। দেশে ফিরেই কয়েকদিন বিশ্রামের পর দলের নীতিনির্ধারনী ফোরামের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানাবেন খালেদা জিয়া।
দেশে ফেরার আগে তার নামে তিনটি মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরোয়ানা মাথায় নিয়েই খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। যদিও গ্রেফতারে বিষয়টি প্রথম থেকে আমলে নেননি বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন না তারা। তারপরও যদি সরকার সেই ধরণের পদক্ষেপ নেয় তাহলে তখন সেটা দেখা যাবে। গ্রেফতার করলে করুক। আমরা তো এপর্যন্ত মিথ্যা মামলায় কতবার জেল খেটেছি। আমার মনে হয় সরকার তা করবে না। যদিও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেফতারের বিষয়ে কথা বলেছেন।
গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া । সেখানে বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে প্রথমে চোখের অপারেশন করান। পরে লন্ডনে প্রখ্যাত বাতরোগ বিশেষজ্ঞ হ্যাডলি ব্যারির অধীনে হাঁটুর চিকিৎসা গ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি সুস্থ।
এদিকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফেরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসিন দলের নেতারা। মন্ত্রিসভায় এনিয়ে আলোচনাও হয়। তারা বলেছিলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার ভয়ে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না। সম্পাদনা:হুমায়ুন কবির খোকন