২০ মাসেও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মেলেনি ২০ হাজার কর্মচারীর পেনশন স্থগিত
হুমায়ুন কবির খোকন : অর্থবিভাগ হতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাব প্রায় ২০ মাসেও অনুমোদন মেলেনি। এর ফলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের সব ধাপ অতিক্রম হওয়া সত্ত্বেও অর্থ বিভাগ এখনো রায় কার্যকর করতে পারছে না বলে বার বার আদালতকে অবহিত করছে। ২০১৬-এর ১৮ জানুয়ারি অর্থ বিভাগ হতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ২০ সহস্রাধিক কর্মচারীর পেনশন স্থগিত রয়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লক্ষাধিক কর্মচারী। এরা সকলেই ১৯৭২ হতে জুন ১৯৯৭ পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ হতে ১৯৯৭-এর জুন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী রাজস্ব খাতে স্থানান্তরসহ নিয়মিত কর্মচারী হয়েছেন। এদের সকলেই প্রকল্পে যোগদানের তারিখ হতে চাকরির ধারাবাহিকতা, সমাপ্ত প্রকল্পের বেতনের ক্রমধারা, প্রকল্প ও রাজস্ব উভয় সমষ্টির ভিত্তিতে চাকরিকাল গণনাসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থ বিভাগ ২৪.৩.২০০৮ ও ২২.৯.২০১১ তারিখের জারি করা দুটি পত্রের মতামত ও ব্যাখ্যার কারণে প্রশাসনিক ও আর্থিক হয়রানির জটিলতা সৃষ্টি হয়। এতে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মচারীদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল দেওয়ার সুযোগ নেই। এর ফলে পেনশনগামী কর্মচারীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।
বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গর্ভনমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম গত ২০১১ সালে আদালতে ৮৯৮৩ নম্বর রিট দায়ের করেন। গত ২০১২ সালের ১৪ মে আদালত অর্থ বিভাগের জারি করা দুটি পত্রকে বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণা করেন। এর ফলে প্রকল্পে যোগদানের তারিখ হতে চাকরিকাল গণনাপূর্বক টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেডসহ জ্যেষ্ঠতা, বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি বহাল রাখা হয়। আপিল বিভাগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধিমালাতে বর্ণিত আনুষঙ্গিক সুবিধাদি বলতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বুঝানো হয়েছে মর্মে উল্লেখ করে। হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ, রিভিউ পিটিশন ও ফারদার রিভিউ পিটিশন হওয়ায় আদালতের রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য গত ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি অর্থ বিভাগ হতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এখনো এটি অনুমোদন হয়নি বলে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান। অর্থবিভাগ উচ্চ আদালতেও জানিয়েছে যে এটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ বিষয়ে সংগঠনের মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, এ রায় কার্যকর করলে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের প্রয়োজন হবে না, বিষয়টি জাতীয় বেতন স্কেল, ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮১, ১৯৮৫, ১৯৯১ ও ১৯৯৭ এর গেজেট নোটিফিকেশন দ্বারা নিষ্পত্তিকৃত ইস্যু। এছাড়া প্রায় ৮০ ভাগ কর্মচারী এ সুবিধা ভোগ করে অবসরে ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব কর্মচারীর সুবিধা একসঙ্গে একই অর্থবছরে দিতেও হবে না। প্রায় ২ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের দিকে তাকিয়ে আছেন কর্মচারীরা। তাদের প্রাপ্যতা কর্তন করায় রিট দায়ের করা হয়েছে। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী