সাক্ষাতকারে সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংক নতুন যে সব আইন করে সব খারাপ উদ্যোক্তার পক্ষে
জাফর আহমদ: কেন্দ্রিয় ব্যাংক নতুন যে সব নীতি করে সব খারাপ উদ্যোক্তার বলে মন্তব্য করেছে করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রিট্রাকসার, পুন:তফসিলিকরণ ও সুদ মওকুফসহ যত সুবিধা দেওয়া হয় আমি মনে করি মোটেই নতুন উদ্যোক্তা, ভাল উদ্যোক্তা এবং সৎ উদ্যোক্তাদের সহায়ক না। আমাদের অর্র্থনীতির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন সৎ উদ্যোক্তা তার সুদ, কিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য কোন প্রণোদনা দেয়না বাংলাদেশ ব্যাংক। একজন ভাল উদ্যোক্তার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কোন শর্ট হলো। বা ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে, ঠিক-ঠাক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। আরও টাকা প্রয়োজন। ব্যাংক সেটা দেবে না। ব্যাংক যাচাইয়ের নামে দীর্র্ঘ সময় নেবে। ততদিন ব্যবসাটি আরো খারাপ হবে। ব্যাংককারদের মনোভঙ্গি সেই সেকেলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকের দায়িত্ব উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। ছোট্টকে উপরে তোলা। ব্যাংকের চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে থাকবে। উদ্যোক্তা আসবে তথাকথিত জামানত দেখাবেন, টাকা নিয়ে যাবেন। তারপর টাকা মেরে দেবে, খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্যাংকারদের এই মনোভাব চিরচারিত, কোন বদল হয়নি। যুগোপযোগি হয়নি। প্রথমত তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। ভাল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিতে হবে। সামনে এগিয়ে নিয়ে আসতে আসবে। ব্যাংক নিজেরাই এগিয়ে আসবে। ব্যাংকারদের মনোভঙ্গি ইতিবাচক হলে হলমার্ক কেলেংকারি বা বেসিক ব্যাংকের ঘটনা ঘটতো না।
তিনি বলেন, ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে অনেক সময় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। কোন ব্যবসা সাময়িকভাবে সমস্যা হয়েছে-তাকে স্পেশাল ‘নার্সিং দিয়ে উঠিয়ে আনবে। কিন্তু ব্যাংক যেটা করছে বলে দিচ্ছে ‘না’। সাথে সাথে এই ব্যবসা কিন্তু ফল্ করবে। সর্বপরি বলবো আমাদের ব্যাংকিং এখনো সেকেলে। মনোভাব পরিবর্তন হয়নি। ব্যবসায়ীবান্ধব হয়নি। যেটা হয়েছে তা হলো ‘বিশেষ’ ধরনের ব্যবসায়ীবান্ধব। কিন্তু সকলের জন্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেভলাপমেন্ট ব্যাংকিং এর কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক এই গর্ভনর। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মেইন কোর ব্যাংকিংয়ের উপর কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নজর কম ছিল। আমি গর্ভনর ছিলাম বলে এটা বলি না। কেন্দ্রিয় ব্যাংক ডেভলাপমেন্ট ব্যাংক নয়। পৃথিবীর কোন দেশে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে ডেভলাপমেন্ট বলে না। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের ডেভলাপমেন্ট করার কোন দায়িত্বও নেই। অর্থমন্ত্রী কি বলবে এই প্রকল্প নাও, টাকা দেবো? কেন্দ্রিয় ব্যাংক একটি ডেভলাপমেন্ট ইনসটিটিউট হয়ে গিয়েছিল। ডেভলাপমেন্ট ব্যাংক হবে কৃষি ব্যাংক ও শিল্প ব্যাংক। এসএমই করেছেন ভাল। কিন্তু তাঁতীদের ঋণ দেবেন-সেটা নিয়ে হৈ চৈ করা, কৃষিঋণ দেবেন, শিল্প ঋণ দেবেন, এক্সপোর্ট ঋণ দেবেন-এগুলো মুল কাজ না। কোর ব্যাংকিং মূল দায়িত্ব, কমপ্লায়েন্স দেখবে-এগুলো মূল দায়িত্ব। কমপ্লায়েন্স শক্ত করে দেখা হয়নি। কমপ্লায়েন্স নেই বলে আজকে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।