দুর্নীতি রোধে স্বদিচ্ছা ও দুদকের হটলাইন
সম্প্রতি ঘুষ ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে সচিবদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই সচিব কমিটির মিটিংয়ে ৭১ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে সচিবদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পে-স্কেলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যে হারে বেড়েছে, তা বিশ্বে বিরল। তাই জনগণ যেন সেবা পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। বেতন যেহেতু বেড়েছে তাই ঘুষ-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না।’ তারই উদ্যোগ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্তিশালী করার নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তেমনি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলো দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে হটলাইন চালু করা। এটি চালু হওয়ার পর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। হটলাইন নম্বর ১০৬ চালু হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটিতে ফোন করে নানা অভিযোগ করছেন। দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে গত বছর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩ নম্বরে। এখানে উল্লেখ করা দরকার, যদিও ২০০৫ সালে একই সংস্থার করা প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে কিছুটা উন্নতির দিকে ধাবিত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটা স্বস্তির কথা; নিশ্চয়ই এটা অসস্তির বিষয়। বিশ্বপরিম-লেও এ পরিসংখ্যান আমাদের মর্যাদা ক্ষুণœ করে। গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য মতে, দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সেলিনা আক্তার মনির ভাষ্য হচ্ছে, টেলিফোন বা যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে দুদক হটলাইনে কল করতে পারবেন যে কেউ। এই কল হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এ জন্য মোবাইল থেকে কোনো টাকা কেটে রাখা হবে না। একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে। এমনকি অভিযোগকারী চাইলে তার বক্তব্য রেকর্ডও করা যাবে এবং অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যে কেউ কল করতে পারবেন। ইদানিং গণমাধ্যমে প্রায় সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়, কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিরোধের ব্যবস্থা হিসেবে নাটকীয়ভাবে ঘুষ নেওয়া অবস্থায় হাতেনাতে অনেক সরকারি কর্মকর্তা দুদকের হাতে আটক হয়ে থানা হাজতে গিয়েছেন। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হটলাইনের এই উদ্যোগটি দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপকতা লাভ করলে দেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি সংকুচিত হয়ে আসবে।
লেখক : আইনজীবী ও সম্পাদক, ল ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ.কম।
সম্পাদনায় : আশিক রহমান ও খন্দকার আলমগীর হোসাইন