সাক্ষাৎকারে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তবে ৫ জানুয়ারির মতো তামাশার নির্বাচনে নয়
আশিক রহমান : বাংলাদেশের জনগণ এবং বিএনপি মনে করে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে এদেশে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। প্রধানমন্ত্রী তো প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সময়ে আপনারা যেকোনো মন্ত্রণালয় নিতে পারেন। কেন এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, লেবেল প্লেয়িং চান বলেই তো?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে তখন যদি বলা হতো সব মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগকে দেওয়া হবে, শুধু নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধানের পদটা একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির কাছে দিন, তখন কি শেখ হাসিনা রাজি হতেন? শুধুমাত্র জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদ্ধতি বাতিল করেছেন। একটি অনির্বাচিত সরকার সংবিধানকে পরিবর্তন করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নেই। নিজস্ব কোনো লোকবলও নেই। নিরাপত্তা বাহিনীও তাদের নিয়ন্ত্রণে নয়। সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব ছাড়া এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। যিনি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন পুরো প্রশাসন তার প্রটোকল নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর পতাকা নিয়ে ঘুরবেন সারাদেশ, আর দেশনেত্রী একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ঘুরবেন, তাকে জায়গায় জায়গায় বাধা দেওয়া হবে এতে তো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করতে হবে। অথবা ওই আঙ্গিকে কোনো একটি সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আন্দোলন-সংগ্রাম হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হোক, তবে তাকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে আসতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন করে তিনি প্রধানমন্ত্রী হোন। জনগণ যাকে চাইবে তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী, সেই দল সরকার পরিচালনা করবে। কিন্তু নির্বাচনের নামে তামাশা করে নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল স্রেফ একটা তামাশা। যেসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মাথা বিকিয়ে দেয় পাজেরো গাড়িতে চড়ার জন্য, ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য, বড় বড় সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের কাছে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। এরকম আর কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না জনগণ।
তিনি আরও বলেন, ৫ জানুয়ারির আগে বেগম খালেদা জিয়া কী বলেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেদিন সংবিধান থেকে বাদ দেওয়া হলো সেদিন থেকেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলে আসছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাদ দিন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো কী সুষ্ঠু হয়েছে? সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছিল? হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে এই রাজনীতিক বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি ভালো নির্বাচন দেশবাসীকে উপহার দিবেন সেটাই প্রত্যাশা করে দেশবাসী, কিন্তু তার উপর আমরা ভরসা পাই না। কারণ দেশের সংবিধান অনুযায়ী তার হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রপতিই তো প্রকৃতপক্ষে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। তার নিয়োগ, ছুটি কিংবা অপসারণ করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির হাতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর লিখিত সুপারিশ ছাড়া রাষ্ট্রপতি কিছুই করতে পারবে না।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা না থাকলে কেন সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে? তাদের বৈধতা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? সময়ই বলে দেবে বিএনপিকে কী করতে হবে।