যুবদের জাগরণ, বাংলাদেশের উন্নয়ন
১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস। এ বছরের (২০১৭) প্রতিপাদ্য হলো- ‘যুবদের জাগরণ, বাংলাদেশের উন্নয়ন।’ ১২ আগস্ট ছিল আন্তর্জাতিক যুব দিবস। সেখানে প্রত্যয় ছিল ‘শান্তিময় বিশ্ব আমরা তরুণরাই গড়ব।’ ইতোমধ্যে ‘জাতীয় যুবনীতি ২০১৭’ ঘোষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকার অনুসারে শেখ হাসিনা সরকার দেশের যুবসমাজকে গঠনমূলক কাজে উৎসাহী করছে। আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় তাদের সহযোগিতা ছাড়া দেশের অগ্রগতি অসম্ভব- এই উপলব্ধিও রয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলের। তবে দেশের অগ্রগতি জানান দিচ্ছে যুবসমাজের এগিয়ে চলা যথার্থই ঘটছে দিকনির্দেশনা মাফিক। যেমন, দেশে অনুকূল ব্যবসা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ১০টি সেবাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম চলছে। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ‘পে-পল’ বাংলাদেশে চালু হয়েছে।]
এখন থেকে ফ্রিল্যান্স রেমিটেন্স উপার্জনকারীরা বিদেশ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে তাদের পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এই সেবার মাধ্যমে প্রবাসীরাও বৈধ চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধা পাবেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ব্যুরো অব পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রাম সাপোর্ট-এর সহকারী প্রশাসক ও পরিচালক ম্যাজি মার্টিনেজ সোলিম্যান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। আবার সামাজিক, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এ বছর ‘জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ লাভ করেছে ৩০টি যুব সংগঠন। এদের মধ্যে থেকে শীর্ষ ১০ সংগঠনকে নির্বাচিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ সংগঠন প্রতিনিধিদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এই আয়োজনের শুরু থেকে আশাতীত সাড়া পায় আয়োজক ইয়ং বাংলা।
২.জাতীয় যুবনীতিতে ১৮-৩৫ বছর বয়সি জনগোষ্ঠীকে যুব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আদমশুমারি ২০১১ অনুযায়ী দেশে যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮০ লক্ষ ২৪ হাজার ৭০৪ জন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এই বিপুল যুব শক্তির মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষায় শিক্ষিত বেকার যুবক/যুব নারীদের জাতি গঠনমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস সরকারের ১টি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি। ৭ নভেম্বর ২০১৬ মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সম্প্রসারণের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে। যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে অত্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ নিউইয়র্কে টঘ-ডড়সবহ এবং এষড়নধষ চধৎঃহবৎংযরঢ় ঋড়ৎঁস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চষধহবঃ ৫০-৫০ ঈযধসঢ়রড়হ-এর স্বীকৃতি দেয় এবং অমবহঃ ড়ভ ঈযধহমব অধিৎফ প্রদান করে। ৩৬ পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২৩৬টি উপজেলার ৬,২২,৮২১ জনকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঋণ আদায়ের হার ৯৭ শতাংশ। যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ৬৪টি জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ১০টি থানায় ১৮,৮৬,২৮৪ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান অব্যাহত আছে। ঋণ আদায়ের হার ৯৪ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৯ বছর ধরে চলছে জনবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক এক সচেষ্ট উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। ভিশন-২০২১, রূপকল্প-২০৪১, সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টকে সামনে রেখে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ ও ১০টি অর্থনৈতিক মেগা প্রকল্প উন্নয়নের গতিধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘যুবকরাই জাতির প্রাণশক্তি, দেশের মূল্যবান সম্পদ এবং দেশের মানুষের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার প্রতীক। দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুব। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলা সম্ভব।’ যুব সমাজ হলো- ‘দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার চালিকা শক্তি।’
৩. ২০১৬ সালে ১ জুলাই হলি আর্টিজানের ঘটনার পর শিক্ষিত যুব সমাজের একাংশের প্রতি জনমনে আতঙ্ক জাগ্রত হয়। সে বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় যুব দিবসে বলেছিলেন, ‘আমাদের যুবশক্তি বিপথে যাক চাই না।’ তিনি বলেন, আমাদের যুব সমাজকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে। দেশের উন্নয়নে যুবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।’ তবে এদেশের যুব সমাজ অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। এজন্য যুবসমাজকে নিয়ে হতাশার কিছু নেই। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভিশন ৪১ ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য যুবদের সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কর্তব্য পালন করলে আমরা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। আর এভাবেই জাতীয় যুব দিবসের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ