ইসলামে নম্রতা ও বিনয়
মিযানুর রহমান জামীল
বিনয় মানুষের ভূষণ আর ভদ্রতা ও নম্রতা এর সহায়ক। বিনয় দ্বারা ব্যক্তিত্ব কায়েম করা সম্ভব, এমনকি বিশ্ব বিজয়ও। যার মধ্যে যত বেশি বিনয় পাওয়া যাবে সেই তত বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। কারণ বিনয় দ্বারা অন্যের চোখে মোহাব্বত ও ভালবাসার সৌধচূড়া নির্মাণ করা যায়। দূরের মানুষকে খুব কাছে টেনে আনা যায়। শত্রুকে করা যায় বন্ধুতে পরিণত। প্রতিপক্ষকে করা যায় আপন দলে অন্তর্ভূক্ত। একটি বিনয়ী মন একটা উত্তপ্ত সমাজকে শান্ত করে দিতে পারে। আর যারা আল্লাহর হুকুম পালন করে তারা শ্রেষ্ঠ বিনয়ী এবং তাদের বন্ধু আল্লাহ। কারণ সূরা মায়িদার ৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁহার রাসূল ও মুমিনগণ যাহারা বিনত হইয়া সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। বিনয় দ্বারা দুনিয়ায় যেমনি সম্মানের অধিকারী হওয়া যায় তেমনি পরকালের জন্যেও এ বিনয় জান্নাত অর্জনের কারণ হতে পারে। কেননা সূরা হূদের ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘যাহারা মুমিন, সৎকর্মপরায়ণ এবং তাহাদিগের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত, তাহারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে।’
পবিত্র কুরআনে বিনীতগণের জন্য সুসংবাদ আর পরকালের অসীম নেয়ামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সূরা হজ্বের ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করিয়া দিয়াছি যাহাতে আমি তাহাদিগকে জীবনপকরণসরূপ যেÑসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়াছি সেইগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদিগের ইলাহ এক ইলাহ, সুতরাং তাহারই নিকট আত্মসমর্পন কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে।’
এক সময় এ বিনয় দিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বিশ্ব বিজয় করেছে। ফিরিয়ে এনেছে হারানো সম্পদ, নির্মাণ করেছে দীনের বাতিঘর। কিন্তু দুখের বিষয়, আজ আমাদের মধ্যে নেই বিনয়ের সেই দীপ্তি যার দ্বারা খলীফাগণ কালের এক একটি চূড়ান্ত অধ্যায়ে ইসলামের স্থপতি এঁকে দিয়েছেন। বিশ্বসম্রাজ্যেকে করেছেন ধর্মের ছোয়ায় শোভাম-িত, নীতির আলোয় উদ্ভাসিত।
মাথাউঁচু মনোভাব বিসর্জন দিয়ে যদি সবাই সবাইকে বিনয় দেখায়, আত্মগরিমা বয়কট করে যদি সকলে সকলের প্রতি মর্যাদাবোধ অক্ষুণœ রাখে তবে সে বিনয় দিতে পারে সফলতার গ্যারনান্টি। এর জন্য সর্বপ্রথম দূর করা চাই অহংবোধ ও হামবড়া ভাব। সাথে সাথে অন্যকে খাটো করে দেখার মনোভাবও বাদ দিতে হবে। সর্বপরি একজন মানুষের আসল গুণ হলো তার ঈমান খাঁটি এবং শিরিকমুক্ত। আর এ নির্ভেজাল ঈমান সম্পর্কে হাদীসে এসেছে ‘খাটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমার নিরাপদ থাকে।’ এখান থেকেই নির্ণয় করা হয় আমাদের ঈমানের সবলতা ও দূর্বলতা। এগুলো জন্য প্রথমে যে দিকটা লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় তা হলোÑ বিনয়ের গুণে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলা, আমি যে পথ দিয়ে হেটে যাই সে পথে অন্য কেউ হাটলেও যেন তার মধ্যে বিনয়ের গুণ চলে আসে।শুধু তাই নয় বিনয় যেন আমাদের জীবনের অঙ্গে অঙ্গে বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ব্যক্তি শ্রেণী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিনয়ের শিক্ষা লেগে বিকশিত হোক মানবপ্রাণ। সরলতার নতুন ছোঁয়ায় আলোকিত হোক বিশ্বপাড়া। বিনয়ের কল্যাণে সমৃদ্ধ হোক দেশ জাতি ও সামাজিক অঙ্গন। এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক আর রাশাদ।