শুধুই নৈতিকতা শিক্ষা নয় প্রয়োজন শালীনতাও
এক পরিসংখ্যানে প্রতিদিন গড়ে ১০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা শুধু গণমাধ্যমে আসে। এর বাইরে বিভিন্ন কারণে অপ্রকাশিত পরিসংখ্যান অনেক বড়। আর এই অবক্ষয়ের প্রতিকারে দেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবীরা নৈতিকতার শিক্ষার নছিহত করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত। অথচ নিত্য-নতুন মাত্রায়, ধরনে ও অপকৌশলে ধর্ষণ, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটছেই। শুধু নৈতিকতা শিক্ষাই নয়, তরুণ-তরুণীদের নৈতিকতার জ্ঞানের সাথে শালীনতা ধারণও যে কত জরুরি তা কেউ বলছেন না। এখনকার তরুণ-তরুণীরা চলনে, বলনে, আদর্শে যে জায়গায় নেমেছে কোনো ধর্মে, কর্মে, সমাজে তা গ্রহণীয় হবে না। বিদেশি সংস্কৃতি, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার তাদের মনোজগতকে তছনছ করে দিচ্ছে। এখনকার উঠতি মেয়েদের পোষাক হলোÑ প্যান্ট, ফতুয়া, নেটের জামা, টাইট-সর্টস যা এমন টাইটফিট ও আঁট-সাঁট যাতে দেহের প্রতিটি অঙ্গের আকার, আকৃতির সাথে দেহের আকর্ষণীয় সৌষ্ঠব কাপড়ের উপরেও বুঝা যায়। নিজেদের রূপ-সৌন্দর্য উজাড় করে তরুণীরা নিজেকে যৌন আবেদনময়ী করে প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় নেমে আসে। উঠতি মেয়েরা রূপান্তরিত হয় জৈবিক কামনা ও যৌনতার খোরাকরূপে। যখন ছেলেদের বইয়ের টেবিলে বা খেলার মাঠে থাকার কথা অথচ সে সময়ে মহল্লার বা গ্রামের রাস্তার মোড়ে-মোড়ে এসব শর্ট, টাইটফিট, খোলামেলা পোশাকের মেয়েদের বেশভুষার উপভোগে উঠতি বয়সের ছেলেদের জটলা থাকে। পরবর্তীতে প্রেম নিবেদন, ইভটিজিং, কটুক্তি আবার প্রেম প্রত্যাখ্যান, ধর্ষণ ও শারীরিক সম্পর্কের ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ এবং সর্বশেষ তরুণীর আত্মহনন। যৌন হয়রানির পরিবেশ মহিলারা নিজেরাই অনেকটা সৃষ্টি করে থাকে। এরপর স্বার্থ শেষসহ নানা কারণে বনিবনা না হলে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়। পাকা তেঁতুল, কামরাঙ্গা বা জলপাই সিদ্ধ, লবণ ও পোড়া মরিচ দিয়ে মাখিয়ে যদি জিহ্বার সামনে আনা হয়, অতঃপর যদি জিহ্বাকে বলা হয়Ñ জিহ্বা! এখন যদি লালা আনো, তাহলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে! মনে রাখতে হবে বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিষ্ফোরণ হবেই। শালীন পোশাকে জড়ানো একটি মেয়ে, ঝিনুকে লুকানো মুক্তার মতো। শালীনতা ধারণ নারীদের সম্মানের প্রতীক, মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ যা অনেক সময় ইজ্জত সুরক্ষারও ঢাল হয়। যেই সমাজে শালীনতা ধারণকে কবর দিয়ে দেওয়া হয়, বুঝতে হবে সেই সমাজের অবস্থা বর্বরতার যুগের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হবে। লিভ টুগেদার, ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টিফাস্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ, বয় ও গার্লফ্রেন্ডের সংস্কৃতি এখন আমাদের দেশে হরদম চলছে। আর আমাদের তরুণ-তরুণীরা এসব বিজাতীয় সংস্কৃতিকে নিজের ভেবে এমন উদ্দম উন্মত্ততা ও উচ্ছলতায়, উৎসবে, আনন্দে নিজেকে সঁপে দেয় যে, তখন শ্লীল আর অশ্লীলের বাছবিচার থাকে না। মাদকের হাতে খড়িসহ নাচ-গান, ফ্রি স্টাইলে উল্লাস, ওপেন এয়ার কনসার্ট, লাইভ ড্যান্স, বেলেল্লাপনা আর লাল, নীল, পানীয় পানের সমারোহসহ তরুণ-তরুণীদের ধ্বংস করার জন্য যা চাই তার সবটার রসদ এ সকল দিবসে মজুদ থাকে। শুধু বিদেশি নোংরা সংস্কৃতি নয় আমাদের দেশিয় গান, সিনেমাও কম যায় না। ‘চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোস কি তাতে’ যা নায়ক গাইলে গান, আর যুবকরা গাইলেই ইভটিজিং? দেশের অনেক চলচ্চিত্র শুরুই হয় যৌন হয়রানি দিয়ে। নায়ক নায়িকাকে উত্ত্যক্ত করার পরে তাদের মধ্যে প্রেম হওয়া। তরুণরা এখান থেকে শিখবে যে, নারীকে হয়রানি করলে ভালবাসা পাওয়া যায়। বাস-ট্রেনে এখন আর যুবসমাজ, ছাত্র-ছাত্রীকে পত্রপত্রিকা বা ম্যাগাজিন পড়তে দেখা যায় না। সাইবার নেটে মত্ত থাকতে দেখা যায়। বাসায় এসে সারা রাত নেটে মগ্ন থাকে এবং চ্যাটিং করতে করতে নেশার আবর্তে চলে যাচ্ছে। টিভির নাটক, অনুষ্ঠান দেখারও তাদের এখন সময় নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সুনৈতিকতা বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা, প্রবন্ধ রচনা, দেয়াল লিখন, পত্রিকা বের করার সাথে এসব কর্মকা-ে যারা ভালো করবে, তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা দরকার। মা-বাবা সন্তানদের হাতে সহজেই উঠিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছা ধ্বংসের হাতিয়ার স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ। ওরা এ থেকে অ্যানজয় করছে অফুরন্ত ফ্রি এমবিসহ ওয়েব ব্রাউজের মাধ্যমে নোংরা ও পর্নফিল্ম দেখা। মাদক, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়ানো রোধে অভিভাবকদের আগে থেকেই সন্তানের ব্যাপারে সচেতন ও সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। ধর্মীয় ও নৈতিকতার শিক্ষার সাথে শালীনতা ধারণসহ গণসচেতনতা না বাড়লে সমাজ বদলাবে না। শুধু সন্তানের মা-বাবা হলেই চলবে না, সন্তানকে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ রেখে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা একজন আদর্শ মা-বাবার দায়িত্ব। প্রত্যেক মা-বাবার উচিত তাদের সন্তানদের সময় দেওয়া। সন্তানদের প্রতিটি কর্মকা-ে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ