সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত অসাধু আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করছে সরকার
আসাদুজ্জামান সম্রাট : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনজীবনে হয়রানি সৃষ্টিকারী অসাধু আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেট দমন করতে সরকার সক্ষম হয়েছে। এই ধরনের সিন্ডিকেট না থাকার ফলে দীর্ঘদিন যাবত ভোক্তা সাধারণ সহনীয় মূল্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয় করতে পারছে। এছাড়া বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে কাজ করার জন্য সরকার প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করেছে। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ প্রশ্নটি ছিল সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার। জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, সরকারের নির্দেশে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গোপনীয় প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাল আমদানির ওপর কোনো সময়ই শুল্ক ছিল না। কৃষকরা চালের ন্যায্যমূল্য পায় না- এটা বলে তখন সরকারের কাছে শুল্ক আরোপের দাবি আসলো। তখন আমরা শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ২৮ ভাগ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছিলাম। এতে কৃষক খুশি হয়েছিল, তারা ন্যায্যমূল্য পেয়েছে। এইবার হাওরে ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় যে টার্গেট ছিল তার থেকে ২০ লাখ টন চাল ঘাটতি দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে এটা বিদেশিরা জানতে পেরে তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এরপর আমরা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেই। প্রথমে ১০ ভাগ হ্রাসের পরও না হওয়ায় আরও ১৬ ভাগ কমিয়ে এখন মাত্র ২ ভাগ শুল্ক রাখা হয়েছে। এখন চালের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, শুল্ক হ্রাসের পর তা কার্যকর করতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। এই সময় আমদানি করা চালের ট্রাক অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্ডারে অপেক্ষায় রাখে। শুল্ক হ্রাস হলেই আমদানি করে লাভবান হবে এই আশায়। এরপর মিডিয়াতে আকস্মিক খবর এলো ভারত চাল রপ্তানি করবে না বাংলাদেশে। এই একটা মিথ্যা সংবাদে চালের দাম বেড়ে গেল। কিন্তু যারা সুযোগ নিয়ে মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বাস্তবতার নিরিখে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।
জাতীয় পার্টির সদস্য নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। আমরা ৭শ মিলিয়ন ডলারের মতো ভারতে রপ্তানি করি। আর ভারত আমাদের দেশে রপ্তানি করে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ভারত আমাদের তামাক ও মদ ছাড়া সকল পণ্যের ডিউটি ফ্রি কোটা দিয়েছে। তৈরি পোশাকে ভারত আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারপরও তারা আমাদের ব্যাপক সুবিধা দিচ্ছে। ভারত আমাদের থেকে তৈরি পোশাকে পিছিয়ে। আমরা তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। একটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি থাকলে সেটা কখনো ক্ষতি করে না। চীন আমাদের দেশে ১১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। আমরা চীনে মাত্র এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করি। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সমান হওয়া সম্ভাবনা খুবই কম। সেই জায়গায় আমরা এখনো উন্নীত হয়নি।
সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য মুহা. গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানি দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ ভাগ। তৈরি পোশাক রপ্তানির এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে নতুন বাজার অনুসন্ধান অন্যতম। তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অনুসন্ধানে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিক ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজসহ সকল রপ্তানি পণ্য উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।