বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার স্বাভাবিক হিসাবের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি সিজারিয়ান বাংলাদেশে
রিকু আমির : প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ জন মা সিজারিয়ানে সন্তান প্রসব করছেন। প্রতিবছর বাংলাদেশে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ১০ লাখ শিশুর প্রসব হচ্ছে, যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) স্বাভাবিক হিসাবের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। হুর হিসাবমতে- সিজারিয়ান প্রসবের হার একটি দেশের মোট প্রসবের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশে মোট প্রসবের ৩১ শতাংশ প্রসব হচ্ছে সিজারিয়ানে। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১৬-তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র (নিপোর্ট), মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জরিপটি পরিচালনা করে। দেশের স্ত্রী-প্রসূতি চিকিৎসকদের ভাষ্য, সিজারিয়ান প্রসবের প্রভাবে মাতৃ-শিশু স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সারাবছরই লেগে থাকে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। কিছু জটিলতার কারণে মা-শিশুর মৃত্যুও ঘটে থাকে। ২ লাখ ৯৮ হাজার জনের সাক্ষাৎ গ্রহণের ভিত্তিতে জরিপটি প্রস্তুত করা হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে- প্রধানত বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রসবের হার বৃদ্ধির ফলে ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ৬ বছরে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে প্রসবের হার ১১ শতাংশ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বেড়েছে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। এই সময়েই এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার ২ থেকে ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রী-প্রসূতি বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কিছু চিকিৎসক আছেন, যারা বাড়তি অর্থের জন্য সিজারিয়ান পদ্ধতি গ্রহণে মা বা সংশ্লিষ্ট পরিবারকে বাধ্য করেন। কিছু পরিবার তাৎক্ষণিক ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটা করেন।
জরিপে বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সব প্রসবের ৮৩ শতাংশ হচ্ছে সিজারিয়ানে। সরকারি ও এনজিও পরিচালিত হাসপাতাল-ক্লিনিকে সিজারিয়ানে প্রসবের হার মাত্র ৩৯ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে ওই অধ্যাপক বলেন, জরিপের কথা অনুযায়ী বলতেই হয়, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক সিজারিয়ান নিয়ে ব্যবসা করছে। তবে তিনি মনে করেন- চাহিদা অনুযায়ী সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা না পেয়ে অনেক প্রসূতি বেসরকারি হাসপাতালে যান, সরকারি হাসপাতালের সেবার পরিধি বৃদ্ধি করা গেলে সিজারিয়ানে প্রসবের হার কমবে। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবসায়িক মনোভাব থাকেই।