রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষ না থাকায় বিশ্বব্যাপী সন্দেহ, সংশয়
রাশিদ রিয়াজ : রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের সমঝোতা নিয়ে দুই দেশের একাধিক মিডিয়ার বরাত দিয়ে পরিবেশিত সংবাদ থেকে যা জানা গেছে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। বলা হয়েছে- সুনির্দ্দিষ্ট একটি ফরম দেবে মিয়ানমার। বাংলাদেশ রাজি থাকলে ফরমটি পূরণের পর তা পরীক্ষা করবে মিয়ানমার, যা যথেষ্ট সময়ক্ষেপণের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় ফিরে তিনি বিস্তারিত বলবেন। মিয়ানমারের অনলাইন মিডিয়া ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমার, মিয়ানমার টাইমস ও ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোরের খবরে বলা হয়েছে যে, সমঝোতা স্মারকে ২ মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর পাশাপাশি ৩ সপ্তাহের মধ্যে দুটি দেশ এ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে, যার মাধ্যমে একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনা গঠিত হবে। কিন্তু ঢাকায় এর আগে মিয়ানমারের মন্ত্রী বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা কোনো জিনিসপত্র কেনাকাটার রসিদ দেখাতে পারলেও তা তার পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। তাহলে ফের নতুন করে সুনির্দিষ্ট ফরম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? কেন বলা হচ্ছে ঢাকা রাজি থাকলে ইত্যাদি.. সংশয় এ কারণে।
রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা অভিযান, উগ্র বৌদ্ধদের হত্যাযজ্ঞ এতো তীব্র মাত্রায় পৌঁছেছে যে, তা বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ইতোমধ্যে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা পুরো বিশ্ব দেখছে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হলে নিষেধাজ্ঞার পথেই হাঁটবে ওয়াশিংটন। এরমানে মিয়ানমারের সদিচ্ছা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনে সন্দেহ রয়েছে। জাতিসংঘ বিষয়টিকে আগেই জাতিগত নিধনের সঙ্গে তুলনা করেছে।
এছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়টি বা আন্তর্জাতিক কোনো ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে রাজি নয় বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। তাহলে অতীতের মতই মিয়ানমার এ বিষয়টি নিয়ে সময়ক্ষেপণ ও ধারাবাহিকভাবে টালবাহানা করবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রোহিঙ্গারা তাদের পাড়া-প্রতিবেশির নাম, ইউনিয়ন নেতাদের ব্যাপারে তথ্য দিলেও তো তা বড় পরিচয়। এধরনের সহজ পদ্ধতির মধ্যে না যেয়ে কেন মিয়ানমার জটিল ফরম পূরণে বাংলাদেশকে বাধ্য করছে এবং তদারকিতে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা রাখতে রাজি হচ্ছে না, সে নিয়েও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার কেন স্বীকার করতে চাইছে না ২৫ বছর আগের চেয়ে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধের মাত্রায় সহিংসতা ঘটেছে এবং তারা ফিরে যাওয়ার আগেই তাদের জমিজমা, বাড়িঘর ফিরিয়ে দেওয়ার একটা সুবন্দোবস্তের জন্যে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা ও তদারকি প্রয়োজন। মিয়ানমার রাখাইনে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ বা তৃতীয় কোনো দেশের প্রতিনিধিকে যেতেই দিচ্ছে না। একবার কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের রাখাইনে নিয়ে গেলেও তাদের সাজানো ঘটনা দেখিয়ে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে যে, রোহিঙ্গারাই রোহিঙ্গাদের ঘরে আগুন দিচ্ছে। এসব কারণেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সদিচ্ছা নিয়ে অনেক সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন