বিশ্বাস করেন আর না-ই করেন, এটাই সত্য
সাইফুর সাগর
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছে। জ্বি এটাই সত্য। এটাকে সরকার যে মোড়কেই সাজিয়ে আনুক, সাধারণ মানুষ তার উদ্দেশ্য ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারে। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে চিরাচরিত নিয়মে আওয়ামী লীগের অনেক বিদ্বান ব্যক্তিরা যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন, ক্ষুদিরামের উদাহরণ দিয়েছেন, শিশুদের রাজনীতি শিক্ষা দিয়ে স্কুল থেকেই দেশের নেতৃত্ব তৈরি করবেন, ব্লা ব্লা ব্লা। নিশ্চয়ই কোনো প্রাইভেট স্কুলে এমনটি হবে না, আধা সরকারি ও পুরো সরকারি স্কুলেই এমনটি হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, এই নিয়ম যারা করেছে তাদের কারো সন্তান সরকারি স্কুলে পড়াশুনা করে না। শিক্ষার কি হবে, কোমর ভাঙবে নাকি ঠেং ভাঙবে, সেটা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। কাঁচা শিশুদের ব্রেনে ঐতিহাসিক গোবর ঢুকিয়ে রাজনীতিতে ফায়দা লোটা খুবই সহজ। এটা তারা বুঝতে পেরেছে। ইংরেজ শাসকদের যম, বিপ্লবি তরুণ ক্ষুদিরাম বসু আর আজকের ‘বাবা বল্টু’ অথবা ‘লটিনরে ফ্লাটরে’ লটিনকে একই মালায় গাঁথার চেষ্টা কত বড় আহাম্মকী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্ষমতার জন্য শিশুদের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে গেছে, খুবই দুঃখজনক। অবশ্য বুড়োরা ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে সিটকে পড়েছেন রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কারণে। এখন অবুঝ শিশু সন্তানদের দিয়ে রাজনীতি করানো ছাড়া উপায় নেই। আমি আমার সন্তান নিয়ে অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম, কি করে আমার দেশে আমার শিশুকে স্কুলে পাঠাব? কলেজ পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতির কারণে আমাদের শিক্ষার বারোটা বেজেছে অনেক আগেই। নতুন নতুন পদ্ধতিগত পরীক্ষা, শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দাও। আমি নিশ্চিত, বাঙালি জাতিকে ধ্বংস ও অশিক্ষিত রাখার এক ঐতিহাসিক ঘৃণিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। আমাদের শিক্ষা, চিকিৎসা, পর্যটন, রাজনীতিকে ধ্বংস করে একটি অসার রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। সেই পরিণতির কফিনে শেষ পেরেকটুকু মারলেন বর্তমান সরকারের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুলে রাজনীতির সূচনা করে। এই স্কুল রাজনীতির অশুভ ফলাফল দেখতে যুগ যুগ অপেক্ষা করতে হবে না, শিগগিরই আমরা ঘরে ঘরে এর কুফল দেখতে পারব। কোমলমতি শিশুদের রাজনীতিতে সংযুক্ত করা আর অন্ধের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া সমান কথা। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের রাজনৈতিক শিকার ছাত্র-ছাত্রীরা বেশিরভাগ নজিরে অস্তিত্ব হারা হয়ে যায়। মেধা নিয়ে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করলেও, মেধাশূন্য হয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। অনস্বীকার্য, আমাদের ছাত্র আন্দোলনের বিশাল ইতিহাস আছে। স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় সব সময় অবতীর্ণ ছিল ছাত্ররা। ভাষা আন্দোলনে, অভ্যুত্থানে, স্বৈরাচার আন্দোলন, সব ধরনের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনেই আমাদের সকল বিদ্যাপীঠের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে ছিল। এবং তাদরে নেতৃত্বেই বিজয় এসেছিল, শান্তি এসেছিল নিঃসন্দেহে। মনে রাখতে হবে, সেই আন্দোলনগুলো ছিল শুধুমাত্র জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে ও স্বাধীনতার প্রশ্নে। তবুও এইভাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার সাথে কোনো বড় ছাত্র সংগঠনের সরাসরি অফিসিয়াল সম্পর্ক ছিল না। ছাত্র সংগঠনের নিজেদের মধ্যে রক্তপাত মুখর দা কুড়াল সম্পর্ক ছিল না। বাবা মায়ের কাছে রাজনীতি এবং বিপ্লব ছিল গর্বের ও অহংকারের। কিন্তু এখন প্রতিটা বাবা মা শিশুকে স্কুলে পাঠিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে, খোকা আবার কখন ফিরে আসবে কি আসবে না। কেন এমন সিদ্ধান্ত, কাদের সাথে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এখন আমরা নিশ্চিত, বাংলার মূমুর্ষ রাজনীতির ব্যবহারে আমাদের বাংলাদেশের অন্ধকার ভবিষ্যতের মিছিলে শিশুদেরকেও যোগ করা হলো। আলোর ভবিষ্যতের রেশটুকু যাও ছিল, তাও গেল।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ