পেশাদার কোচের কাছ থেকে এ সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত
হাতুরে সিংহ দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছিলেন, তার এই সিদ্ধান্তকে আমি যৌক্তিক মনে করি না। উনার সিরিজটা শেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তিনি সরাসরি না বলে ফোনের মাধ্যমে সফর চলাকালীন এ কথা বলেছিলেন। ফলে সফরে যদি কোনো ঝামেলা হয়ে থাকে, খেলোয়াড়েরা কোচের কথা শোনেননি, তিনি এরকম অভিযোগ করেছেন। এটা উল্টো হতে পারে যে, কোচের পদত্যাগ করার ফলে প্লেয়াররা মনে করেছে তিনি আমাদের কোচ না। ফলে খেলোয়াড়রা এক ধরণের স্বাধীন হয়ে গেছে। কোনো মনিটরিং দেখেনি, নিজেদেরকে অভিভাবকহীন মনে করেছে। যার ফলে খেলোয়াড়রা আরও বেশি টিম রুল ব্রেক করেছে। এটা হাতুরে সিংহ এর কারণেও হতে পারে। হাতুরে সিংহের কাছ থেকে বা কোনো পেশাদারি কোচের কাছ থেকে এই ধরণের সিদ্ধান্ত কখনই আশা করা যায় না। কারণ, প্লেয়ারদের সঙ্গে ভুলবুঝাবুঝি বা ইমোশনের কারণে পদত্যাগ করা কোচের কাজ নয় বরং প্লেয়ারদের সঠিক পথে নিয়ে আসাই হচ্ছে কোচের অন্যতম কাজ। তিনি যদি এটা না পারেন বা কোনো খেলোয়াড়ের কারণে সমস্যা হলে সেটা তিনি টিম ম্যানেজমেন্টকে বলতে পারতেন। তিনি একটা কথা বলেছেন, সাকিব আল হাসান দক্ষিণ আফ্রিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে না খেলে বিশ্রামে কেন যাবেন? আমি নিজেও মনে করি, সাকিব আল হাসানের এই সিরিজটি না খেলা অন্যায় হয়েছে। এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ না খেলে নিজের ব্যাক্তিগত কাজে লিপ্ত থাকা আসলেই দৃষ্টিকটু হয়েছে। সাকিব আল হাসান যে যায়নি, এখানে এই দায়টা কার? প্রথমত সাকিব কেন এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিবে ? সাকিব এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিলেও ক্রিকেট বোর্ড কেন তাকে সমর্থন দিল? ক্রিকেট বোর্ড যখন তাকে অনুমতি দিল, তখন কেন হাতুরে কোনো কথা বলেননি? তিনি তখন বোর্ডকে বলতেন, বা যোগাযোগ করতেন যে, এটা তিনি পছন্দ করছেন না। তিনি কিন্তু তখন কিছু বলেননি। কাজেই হাতুরে সিংহ যদি তখন কিছু বলতেন, তাহলে বোর্ডও সাকিবকে ফোর্স করতে পারত। তিনি এ ব্যাপারে আপত্তি দেখানো সত্ত্বেও যদি ক্রিকেট বোর্ড কোনো পদক্ষেপ না নিত, তখন তিনি বলতে পারতেন। তিনি যদি ক্রিকেট বোর্ডকে ফোর্স করতেন, তাহলে বোর্ড বাধ্য হতো তাদের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করতে। আমি মনে করি, সিনিয়র প্লেয়ারদের দায়ের চেয়ে ক্রিকেট বোর্ডের দায় বেশি। কারণ, যখন কোনো সিরিজ বা ট্যুর থাকে তখন ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব থাকে তাদেরকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা। এটা আল্টিমেটলি ক্রিকেট বোর্ডেরই দায়িত্ব। এখানে বেশ কিছু সমস্যাও ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন বোর্ডের একটা ইলেকশন চলছিল। ফলে ওই সিরিজে আমাদের ম্যানেজার একজন ছিলেন, যিনি নিয়মিত ম্যানেজার তিনি ছিলেন না। যার ফলে পুরো দলের উপর একটা গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছিল। এই ব্যাপারটিতে আমি হাতুরে সিংহের সঙ্গে একমত পোষণ করছি। তিনি একটা কথা বলেছেন, আমাদের প্লেয়ারদের মধ্যে অনেকে দেশের আগে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। নিজেদের মধ্যে একটা ইগো, দ্বন্দ্ব, বোঝাপড়ার সমস্যা রয়েছে। আমি আসলে বাংলাদেশ দলের এই জায়গাটাকে গুরুত্ব দিতে বলব। এটা কোচের অবজারভেশন যে, আমাদের খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে একটা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এখানে আসলে হাতুরে সিংহের কোনো দোষ দিয়ে লাভ নেই। একজন কোচ কখন বলেন যে, এই দলে তার আর দেওয়ার কিছু নেই। তিনি এ কথাও বলেছেন, আমাদের প্লেয়াররা দেশের জন্য খেলে না। এই কথাটা পুরোপুরি সঠিক না। তারা টিম পারফরমেন্সের চেয়ে নিজেদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটা খুবই বড় একটা অভিযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও কিন্তু আমাদের এটা মনে হয়েছে আমাদের টিম আসলে টিমের মতো খেলছে না। হাতুরে সিংহ যে কারণে বেশি পপুলার হয়েছিলেন, তিনি দলের মধ্যে একটা ডিসিপ্লিন নিয়ে এসেছিলেন। একই প্লেয়ার এর আগে খারাপ খেললেও হাতুরের সময়ে তারা ভাল করেছে। এটাই ছিল হাতুরে সিংহের ম্যাজিকের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে যেটা একটু অদ্ভুত সেটি হচ্ছে, তিনি পুরোপুরি ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন চেয়েছিলেন। তিনি ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির মাধ্যমেই তিনি তার ক্ষমতার চর্চা করতেন।
পরিচিতি : ক্রীড়া বিশ্লেষক
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সাগর গনি
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ