মুখ্যমন্ত্রী মমতার মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে আনন্দবাজারে ‘ঘোরালো ধন্দ’! মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘সম্পাদক সমীপেষু’ কলামে গতকাল ৬ জানুয়ারি ‘মুসলিম সংখ্যা’ শিরোনামে জনৈক মিলন দত্তের একটি চিঠি ছাপা হয়েছে। তাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদত্ত রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন তিনি। তাই সেখানে তার তথ্য-উপাত্তগত প্রশ্নবাণ বিবেচনায় বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের জানা প্রয়োজন।
এতে সূচনায় লেখক লিখেছেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৫ বছর পূর্তি উপল ক্ষে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘…এ রাজ্যে ৩১.৯% মুসলিম। আমি না দেখলে তাদের কে দেখবে?’ তাই উদ্দেশ্য বিবৃত করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, ‘তিনি রাজ্যের কর্ত্রী, সংখ্যালঘু মুসলিমদের তিনিই তো দেখবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এত মুসলমান মুখ্যমন্ত্রী পেলেন কোথা থেকে, সেই কিঞ্চিৎ ধন্দে পড়ে এই চিঠি’।
এরপরই পরিস্যংখ্যান তুলে ধরে লেখকের প্রশ্নÑ ‘২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনা প্রতিবেদনে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ২৭.০১% মুসলিম আর ৭০.৫৪% হিন্দু। গত ছ’বছরে মুসলিম জনসংখ্যার ব্যবধান ৪.০৮% বেড়ে ৩১.০৯% হয়ে যাওয়াটা একটু অস্বাভাবিক ঠেকেছে। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মুখ নিঃসৃত তথ্য ভুল বা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি?’
এতে ওই লেখক সন্নিবেশিত উপাত্তে দৃশ্যমান যে, ১৯৫১ থেকে ২০১১ অবধি সাতটি দশকওয়ারি হিসাবে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯.৫৪% থেকে পর্যায়ক্রমিক ৩ শতাংশের ব্যবধানে দাঁড়িয়েছে ২৭.১%। ফলে পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় গত তিন দশকে হিন্দুর তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যাবৃদ্ধি কমেছে। অর্থাৎ মুসলিম মহিলাদের মাথাপিছু সন্তানের সংখ্যা কমছে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও গত তিন দশকের উপাত্তে দৃশ্যমান যে, মুসলমানদের মধ্যে মেয়েদের গড় বিয়ের বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিম্নমুখী। ফলে মুসলিম জনসংখ্যার ক্রমাবনতি যথাক্রমে ৩.৬% ও ৪.৬% হওয়ায় লেখকের জিজ্ঞাস্যÑ ‘মুখ্যমন্ত্রীর বলা এমন একটা পরিসংখ্যান মুসলিম সমাজের এই সাফল্যটাকেই নাকচ করে দিচ্ছে না তো?’ পাশাপাশি অপর দুটি প্রশ্ন হচ্ছেÑ ‘এতে কি মুসলমানদের ভাল হবে? নাকি তাঁর ভোটব্যাংক মজবুত হবে?’
তবুও লেখকের ‘জেরবার’ অন্যত্র। সেজন্য লিখেছেন, ‘অল্প কিছু দিনের মধ্যে মুসলমান এ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে। অচিরেই পশ্চিমবঙ্গ আর একটা বাংলাদেশ হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বহু শিক্ষিত হিন্দু বাঙালির ঘুম নষ্ট হচ্ছে।’ এমনকী প্রকৃত হিসাবে রাজ্যে বেসরকারি মাদ্রাসা বা খারিজি মাদ্রাসা ১২০০-র বেশি নয় বলে মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত দশ হাজার সংখ্যাটিও সঠিক নয়।
তথাপি পরিসমাপ্তিতে লিখেছেন, ‘মুসলমানদের একাংশের মধ্যে চালু ধারণা, জনশুমারিতে মুসলমানের প্রকৃত সংখ্যা দেখানো হয় না, কমিয়ে দেখানো হয়। ৩১.০৯% সেই প্রকৃত সংখ্যাটা নয় তো! মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য যদি সত্য হয় তা হলে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা ৭০ শতাংশের নীচে নেমে যায়। সেটাও অনেকের শঙ্কার কারণ হতে পারে। ক্ষুব্ধ করতে পারে। ২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হানাহানি লেগেই আছে। এমন একটা তথ্য পরিস্থিতিকে ঘোরালো করে তুলবে না তো!’
ই-মেইল : নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স