জঙ্গি নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ সক্রিয় অজ্ঞান পার্টি
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : গুলশান শোলাকিয়া এবং কল্যাণপুরে জঙ্গিহামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্কাবস্থায় রয়েছে। প্রায়ই ধরা পড়ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।
আর এই ফাঁকে সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টি। এদের কবলে পড়ে গত এক মাসে নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী হারিয়েছেন অন্তত কয়েকশ মানুষ। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় প্রতিদিনই দুই তিনজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর কমপক্ষে ৪০টি স্পটে অজ্ঞান পার্টির অর্ধশতাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ঢাকার রাজপথের পাশাপাশি তারা ভাড়াটিয়া সেজে বাসা-বাড়িতেও লুটতরাজ চালাচ্ছে। পুলিশের নজরদারি, নিয়মিত অভিযান কোনো কিছুতেই তাদের প্রতিহত করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে গত এক মাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপরতা চালাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এদের তৎপরতা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি পিছিয়ে নেই। ইতোমধ্যে অজ্ঞান পার্টির একাধিক নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের অনেকেই জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে গেছে। তারপরও পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ফুটপাত, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে, হাটবাজার ও বিপণি বিতানসহ জনবহুল জায়গায় হকার হিসেবে অবস্থান নেয়। তারা ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, বিস্কুট, চকলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদির সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে সহজ-সরল মানুষদের টার্গেট করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এ চক্রের সদস্যরা ৪-৫ জন এক দলে কাজ করে। প্রথমে অপরাধীদের মধ্য থেকে দু-একজন টার্গেট হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চালায়। সে ইশারা দিলে অজ্ঞান পার্টির বিক্রেতা বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী বিক্রির ছলে তাদের কাছে চলে আসে। একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপনের জন্য প্রতারক সদস্য তাদের সদস্যদের কাছ থেকে খাবার কিনে খেতে থাকে। একই সঙ্গে টার্গেট হওয়া ব্যক্তিকে খাবার খেতে প্ররোচিত করে। ওই ব্যক্তি সম্মত হলে তাকে ট্যাবলেট মেশানো খাবার খাওয়ানো হয়। খাবার খেয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ওই ব্যক্তি অচেতন হলে তার কাছ থেকে মূল্যবান দ্রব্যাদি নিয়ে চম্পট দেয়।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, অজ্ঞান করে সাধারণ মানুষের ধন-সম্পদ লুট করে নিয়ে যাওয়ায় সাধারণত ৩২৮ ও ৪২০ ধারায় মামলা করা হয়। ৩২৮ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদ-। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ ধরনের (অজ্ঞান পার্টি) অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। আইনের ফাঁকে তারা ১৫ দিন না হয় এক মাসের মধ্যে সহজে বের হয়ে যায়। সম্পাদনা : পরাগ মাঝি