আনিসুর রহমান তপন : সদ্যসমাপ্ত ২০১৭ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৭ জন। আহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ১৯৩ জন। ৪ হাজার ৯৭৯টি দুর্ঘটনায় ব্যাপক এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, পিএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সংগঠন ফুয়ারার সভাপতি ইকরাম আহম্মেদ, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, প্রাক্তন সংসদ সদস্য হুমায়ন কবির হিরু, মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে সংগঠনটি জানায়। দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ হিসেবে ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধি-বিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ও মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানোর সুপারিশ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। তাছাড়া টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচার চালানোর দাবি করা হয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত দখল মুক্ত করে সুপারিশে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং আঁকা, চালকদের পেশাদারি প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে হাত, পা বা অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন ১ হাজার ৭২২ জন। আর তাতে অর্থিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির প্রায় দেড় থেকে দুই শতাংশ। এসময় ১ হাজার ২৪৯টি বাস, ১ হাজার ৬৩৫টি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৭৬টি হিউম্যান হলার, ২৬২টি কার, জিপ, মাইক্রোবাস, ১ হাজার ৭৪টি অটোরিকশা, ১ হাজার ৪৭৫টি মোটরসাইকেল, ৩২২টি ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ৮২৪টি নছিমন-করিমন দুর্ঘটনার শিকার হয়। এর আগে ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছে। এই হিসাবে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সালে মোট দুর্ঘটনা শতকরা ১৫ দশমিক ৫ ভাগ, নিহত ২২ দশমিক ২ ভাগ, আহত ১ দশমিক ৮ ভাগ বেড়েছে।
বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্ক হওয়ায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে সংগঠনের মহাসচিব চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে হেড ফোন ব্যবহারের কথা বলেন। এছাড়া মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডে যানবাহন উঠে পড়া, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াতও অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি। সম্পাদনা : হাসিবুল ফারুক চৌধুরী