জুমাদিউল আউয়াল মাসের করণীয় বর্জনীয়
মুফতি আখতার ফয়জী
আরবি প্রতিটি মাসেরই আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। ইসলামে মাসগুলোও বিভিন্ন গুরুত্ব থেকে খালি না। মুসলমান আমল থেকেও কখনো খালি থাকে না। প্রতিটি মূহুর্ত তার আমলে কাটে। একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় আমলহলো মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর অটল থাকা। সময়ের দিকে লক্ষ্য করে এই মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকায় মুমিনের সবচেয়ে মূলবান জিনিস ঈমান-আক্বীদার বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
‘হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার রাসূল এবং তার সাথীগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদেরে মাঝে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতহ:২৯) বর্ণিত আয়াত হুদাইবিয়ার সন্ধির পরে নাযিল হয়। হুদাইবিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলে ঘোষণা করা হয়। যদিও বাহ্যিক ভাবে বিজয়ের কোন চিহ্ন তাতে বিদ্যমান ছিল না। যে কারণে হযরত উমর ফারুক রাযি. সহ অন্যান্য সাহাবীগণ এ সন্ধির ব্যাপারে খুবই পেরেশান ছিলেন। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা এ সন্ধির অনেক হেকমত প্রকাশ করলেন। সুলহে হুদাইবিয়ার পরপরই খাইবার বিজয় হয়ে গেলো। প্রচুর গনীমত মুসলমানদের হাতে এসে এতদিনের আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। অপর দিকে ইয়াহুদী জাতি সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হলো এবং সময়ের ব্যবধানে মক্কা বিজয় হয়ে চরম ও পরম লক্ষ্য অর্জিত হলো।
কাফেরদের সাথে সন্ধিপত্রে রাসূলুল্লাহ শব্দের স্থলে ‘মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ’ লিখতে হবে। এ দাবি নিয়ে তারা খুবই পীড়াপীড়ি ও বাড়াবাড়ি করতে লাগলো। তখন রাসুল (সা.)-এর নির্দেশে তাদের দাবি মেনে নিয়ে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি মুছে ফেলা হলো এবং তদস্থলে “বিন আব্দুল্লাহ” লেখা হলো। দ্বীনের স্বার্থে রাসুল (সা.)-এর বিনয় ও ন¤্রতার এই প্রকাশ আল্লাহ তা‘আলার দরবারে সমাদৃত হলো। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিধান [যে ব্যাক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন] অনুযায়ী এ আয়াতের মধ্যে বিশেষভাবে রাসুল (সা.)-এর নামের সাথে রাসূলুল্লাহ্ শব্দ নাযিল করে চিরস্থায়ী করে দিলেন-যা কিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষ কর্তৃক লিখিত ও পঠিত হতে থাকবে। আল্লাহ ব্যতীত আর কেউই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয় বা অন্য কাউকে ইবাদত করার কোন সুযোগ নেই। কারণ স্পষ্ট। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা। তিনিই আমাদের কল্যাণার্থে যা কিছু দরকার সব কিছুই সম্পন্ন করেছেন, দিয়েছেন। তিনি সমস্ত উত্তম গুণের পরিপূর্ণ অধিকারী। নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. কে বললেন- হে ইবনে আব্বাস! সমগ্র দুনিয়ার মাখলুকাত যদি তোমার কোন কল্যাণ বা ক্ষতি করতে চায় অথচ আল্লাহ তা‘আলা যদি না চান, তাহলে মাখলুক তোমার বিন্দুমাত্র উপকার বা ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার উপকার বা ক্ষতি করার সিদ্ধান্ত করেন তাহলে সমগ্র মাখলুক একত্র হয়ে তা বন্ধ করতে সক্ষম হবে না। (সূরায়ে ইউনুস-১০৭) আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপকার বা অপকার সাধনে কারো মুখাপেক্ষী নন। কিন্তু মাখলুক কারো উপকার বা অপকার করতে সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহ তা‘আলার মুখাপেক্ষী। তাই সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে নিজের জীবন অতিবাহিত করার চেষ্টা করা। প্রধান মুফতি, জামিয়া মাদানিয়া রওজাতুল উলূম কুমিল্লা