ওমর ফারুক খন্দকার
পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী রয়েছে সকলেই রিজিকের মুখাপেক্ষী। রিজিক ছাড়া কোন প্রাণী বাঁচতে পারে না। জীন-ইনসান, পশু-পাখি, জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ সব কিছুই রিজিকের মুখাপেক্ষি আর রিজিক বলা হয় এমন বস্তুকে যা কোন প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে, যা তার দৈহীক শক্তি সঞ্চার করে প্রবৃদ্ধি সাধন করে এবং জীবন রক্ষা করে। এই প্রাণীগুলোর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ন্যাস্ত। এই দায়িত্ব আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দেয়ার মত কোনো সত্বা বা শক্তি মহা বিশ্বে নেই। জমিনেও নেই আসমানেও নেই। বরং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে প্রাণীকূলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিজিকের জিম্মাদারিও সেচ্ছায় নিজ দায়িত্বে গ্রহণ করেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা যখন প্রতিটি প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তখন অনাহরে কোন প্রাণীর মৃত্য বরণ করার কথা নয়, অথচ অভিজ্ঞতা হল অনাহারে মারা যায়। এর রহস্য কি? উলামায়ে কিরাম এর বিভিন্ন জওয়াব দিয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জবাব হল, আল্লাহ তা‘য়ালা রিজিকের দায়িত্ব গ্রহণ করার অর্থ হবে প্রাণীর আয়ূষ্কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। আয়ূষ্কাল শেষ হয়ে গেলে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হয়। এখন এই মৃত্যু কখনো রোগ ব্যাধীর কারণে হয়, কখনো দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে হয়, কখনো অগ্নি দগ্ধ হয়ে হয়, কখনোবা পানিতে ডুবে হয় এগুলো সবই এক একটি মাধ্যম। আসল কথা হল তার হায়াত শেষ। একটা ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে নিয়ে নেয়। এমনিভাবে কোন কোন প্রাণীল ক্ষেত্রে তার আয়ূষ্কাল শেষ হয়ে যায় তখন তার রিজিকের সরবরাহ আল্লাহ তা‘য়ালা বন্ধ করে দেন। অত:পর কোন প্রকার রোগ ব্যাধি বা দুর্ঘটনা ছাড়াই তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। আমরা আফসোস করে বলি লোকটা অনাহারে মারা গেল। খেতে পারলে মরত না এটা আমাদের ভুল ধারণা। মূল কথা হচ্ছে তার হায়াত শেষ। যদি হায়াত বাকি থাকত তাহলে সে কখনো না খেয়ে মরত না। যথা সময়ে তার নিকট তার রিজিক পৌছে যেত। হয়ত সে নিজের চেষ্টা শ্রমের মাধ্যমে ব্যবস্থা করত না হয় সরাসরি আসমান থেকে তার কাছে তার রিজিক পৌঁছে যেত তবুও না খেয়ে মরত না।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন: “ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জিবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী অস্থায়ী সম্বন্ধে অবহিত” (সূরা হুদ আয়াত নং ৬)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন: “নামায শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহকে স্বরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও” (সূরা জুমআ আয়াত নং ১০) রিজিক হাসিলের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা বৈধ পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সমস্ত মানুষকে হালাল রুজি উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। হালাল রিযিক দ্বারা ইবাদতের তৌফীক লাভ হয়, অন্তরে নূর সৃষ্টি হয়, এলেমে বরকত হয়, মনে সৎ সাহস সৃষ্টি হয়।