শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত টাকা জাদুঘর ও একজন এ্যাঞ্জেল অলিভিয়া
সৈয়দ রশিদ আলম
গত বছরের শেষ দিনে টাকা জুদঘরে প্রথমবারের মতো সাউথ ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ৭৫ জন শিক্ষার্থী ও তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হলেন। তাদেরকে টাকা জাদুঘরে স্বাগত জানালেন টাকা জাদুঘরের উপ-মহাব্যবস্থাপক রাজেন্দ্র লাল তালুকদার ও যুগ্ন পরিচালক খন্দকার আনোয়ার শাহাদাত। তিনটি দলে বিভক্ত করে তাদেরকে টাকা জাদুঘর এ প্রদর্শিত মুদ্রার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। সে দিন যারা গাইডের দায়িত্ব পালন করলেন তারা হলেন টাকা জাদুঘরের যুগ্ন পরিচালক খন্দকার আনোয়ার শাহাদাত, নতুন গাইড এ্যাঞ্জেল অলিভিয়া ও টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রশিদ আলম। শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত সকল মুদ্রার সাথে পরিচিত হলেন একই সাথে টাকা তৈরির ইতিহাস ও ঐতিহ্য জানলেন। মুদ্রা যে শুধু মুদ্রা নয়, ইতিহাসের প্রামান্য দলিল সেটা তাদের বোঝানো হল। দুপুর ১২ টার দিকে ৭৫ জন শিক্ষার্থী ও তাদের শিক্ষকদের টাকা জাদুঘর ও টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের নতুন ব্যাংক নোট উপহার দেওয়া হয়। সব চাইতে মজার ব্যাপার এই যে, শিক্ষার্থীরা টাকা জাদুঘরের নতুন গাইড এ্যাঞ্জেল অলিভিয়ার কাছে বার বার ছুটে যাচ্ছিলেন। তিনি তার যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে প্রতিটি মুদ্রার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। যতক্ষণ তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন মুখে ছিল মিষ্টি হাসি যা শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করছিল। সাধারণত দেখা যায় জাদুঘরের গাইডদের মুড অফ করে থাকতে, কিন্তু টাকা জাদুঘরে যোগদানের পর থেকে নতুন গাইড এ্যাঞ্জেল অলিভিয়া টাকা জাদুঘর কে আলোক রশ্মি দিয়ে আলোকিত করে রাখছেন। অবসর মুহুর্তে তিনি মুদ্রার উপর তৈরি করা বই পাঠ করছেন অথবা কোন না কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। টাকা জাদুঘরের গাইড হিসেবে যোগ দেয়ার পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি টাকা জাদুঘরে মনোনয়ন পেয়েছেন। নেত্রোকোণার এক কৃষক পরিবারের সন্তান এ্যাঞ্জেল অলিভিয়া ব্যক্তিগত ভাবে মিশুক প্রকৃতির হওয়ার কারণে টাকা জাদুঘরে যারা মন খারাপ করে প্রবেশ করছেন তারা হাসি মুখে যার যার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। টাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে পাঠক নন্দিত একাধিক পত্রিকায় টাকা জাদুঘরের উপর আমার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রথম দেখলাম টাকা জাদুঘর যেন ফুলের বাগিচায় পরিণত হয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা যখন টাকা জাদুঘরে যান তখন দক্ষতার সাথে তিনি টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত মুদ্রার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। টাকা জাদুঘর বাংলাদেশ বাংক দ্বারা পরিচালিত হলেও এটি এখন সবার কাছে তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এখনও টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করেননি তাদেরকে টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। টাকা জাদুঘরে আসলে আপনি আড়াই হাজার বছর আগের তৈরি করা পাঞ্চমার্ক এর সাথে সাথে প্রাচীন যুগের সবমুদ্রার সাথে যেমন পরিচিত হবেন, তেমনি সমকালীন বিশ্বের সব ব্যাংক নোট, ধাতব মুদ্রা ও মুদ্রা তৈরির সকল উপকরণের সাথে পরিচিত হবেন। শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সকাল ১০:০০ থেকে বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার বন্ধ। শুক্রবার বিকেল ৪:০০ টা থেকে ৭:০০ টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। টাকা যাদুঘরের ঠিকানা: বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেণিং একাডেমীর ২য় তলায়, মিরপুর, ঢাকা। টাকা জাদুঘর প্রবেশ করতে কোন প্রবেশ ফি আপনাকে দিতে হবে না। এখানে এসে আপনি মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে ০১ লক্ষ টাকার স্মারক নোটে আপনার ছবি তুলে নিতে পারবেন। যারা এখনও টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করেননি তারা আর বিলম্ব না করে দেখে আসতে পারে টাকা জাদুঘর।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ