নারীর নেতৃত্ব ও সম্ভাবনা
নেতৃত্ব হলো ‘এমন এক সামাজিক প্রভাবের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে মানুষ কোনো একটি সার্বজনীন কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য মানুষের সহায়তা ও সমর্থন লাভ করতে পারে’।
তিনিই কার্যকর নেতা যিনি ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে সফল হওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং কোনো সংস্থা বা সমাজের প্রত্যাশা পূরণকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান।’ এইসব গুণাবলীর বিচারে জন্মগতভাবেই নারী নেতৃত্বদানের যোগ্যতার অধিকারী। নারীর নেতৃত্বদানের প্রক্রিয়া শুরু হয় সংসার জীবন থেকে। তাইতো নেপোলিয়ান বলেছেন, ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব।’ কারণ সন্তানের প্রথম অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মায়ের কাছে শুরু হয়। এখান থেকে নারী নেতৃত্বদান প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বর্তমান বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়ন বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। যা এখন উন্নয়নের নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন এর কথা মাথায় রেখে বলা যায়, এখন বাংলাদেশে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার ও মাননীয় বিরোধিদলীয় নেত্রী নারী সমাজের তিন উজ্জ্বল প্রতিভূ। এখন বিচারপতি থেকে শুরু করে সরকারের সচিব পর্যায়ের অনেক দায়িত্বশীল পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন বিমানের পাইলট, প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্য, দক্ষতার সঙ্গে তারা এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে। বাংলাদেশে উচ্চস্তর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নারীরা যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে, তা অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয়। বাংলাদেশের নারীরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে তার পদচিহ্ন এঁকে এসেছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্ববৃহৎ মাধ্যম পোশাকশিল্পের ৮৫ শতাংশ নারী শ্রমিক এবং এই নারীরা পোশাক শ্রমিকদের নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রতন্ত্রের প্রায় সবক্ষেত্রে নারীর পদচারণা উন্নতির জন্য একটি সম্ভাবনাময়। এই সময়ের নারী নেতৃত্বদানের সুফল এর কথা মনে রেখে নারীকে আরও বেশি এগিয়ে আসতে হবে। পথের বাঁধাসমূহ চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে সচেতনতা, সাহস, প্রতিবাদের আকাক্সক্ষা ও নেতৃত্বদানের যোগ্যতা।
জানা মতে, উন্নয়নের স্রোতধারায় এখনও নারীকে প্রার্থিতহারে যুক্ত করা যায়নি। একজন নারীও যদি বাইরে থাকে তাহলে এটি স্বার্থক হবে না। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অর্ধাংশের সুশিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান নারীবান্ধব সরকারকর্তৃক প্রদেয় সব সুযোগের সুব্যবহার করে নারীকে সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে।
নারীকে হয়ে উঠতে হবে অধিকার সচেতন, নিজের এবং অন্যের। যদি নারী তার প্রাপ্য বুঝে নিতে পারে তাহলে সে অন্যের অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায়, শেষ ভালো যার সব ভালো তার । আবার এটাও বলা যায়, প্রভাতের সূর্য দেখে বলা যায় দিনটি কেমন কাটবে। নারী উন্নয়নের যে প্রবাহ চলছে তাতে আমাদের জন্য যেমন আশার বাণী আছে, তেমনি আছে অনেক সম্ভাবনা। সে সম্ভাবনাকে কার্যকর করার জন্য সকল অবস্থান থেকে সকলকে হাত মেলাতে হবে।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন