আমি দুবছর জেলে বসে আপনার কথা ভাববো
আমার গল্প লিখতে ইচ্ছে করে, মুশকিল হলো আমি কোনো গল্প জানি না। মানে হলো, আমি গল্প জানি, বানাতে জানি না
বা আমার জীবনে বলার মতো কোনো গল্প নেই। তবুও আমার গল্প লিখতে ইচ্ছে করে। এ কারণে আমি ঠিক করেছি আমি জানা গল্পই বলব।
আমার আজকের গল্পটা খুব ছোটবেলায় পড়া। মা অনেক গল্প পড়তেন। তার বেশিরভাগই ছোটদের উপযোগী নয়। মা সেই গল্পগুলো আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইতেন। আমার আরও উৎসাহ বাড়ত। সে রকম একটা গল্প বলি। গল্পের নাম, লেখকের নাম ভুলে গেছি, গল্পের বেশ খানিকটাও স্মৃতির অতলে।
আসাম নাকি দার্জিলিং নাকি শিলং নাকি শ্রীমঙ্গল। মানে এমন একটা জায়গা যেখানে চা বাগান রয়েছে। ধরা যাক, জায়গাটার নাম শ্যামলী। শ্যামলী টিএস্টেটের ম্যানেজার এতটাই সুপুরুষ, তাকে বাঙালি ভাবা কঠিন। নাম পরিতোষ মুখার্জি। পরিতোষ মুখার্জি মাসখানেক হলো বিয়ে করেছেন অনিমা ব্যানার্জিকে। একেবারে কুষ্ঠি আর পাঁজি মিলিয়ে। অনিমা ব্যানার্জির রূপের বর্ণনার জন্য আলাওলকে লাগবে। তাই সে চেষ্টা মুলতবি।
পরিতোষ আর অনিমার ব্যাপারটা শুরু থেকেই স্বপ্নের মতো। দুজনই প্রকৃতি প্রেমিক। নিজেদের রূপেগুণে মুগ্ধ দুজনে। কয়েক দিনের মধ্যে রাস্তা বা রাস্তার ছায়া দিয়ে গাড়ি চালানো বিকেলের নাস্তার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ালো। হুডখোলা ওই জিপে সুন্দরতম দম্পতিকে রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে দেখা শ্যামলীর লোকজনের অন্যতম প্রিয় কাজে পরিণত হলো।
দুই মাস পরের কথা। রাজনাথ সিং এর কয়েক দিন ধরে জ্বর, গা ব্যথা, মাথাব্যথা। অনিমা আর পরিতোষ হাঁপিয়ে উঠলো। প্রস্তাবটা পরিতোষই দেয়।
গাড়ি তো চালাতে জানি, চলো ঘুরে আসি।
চলো চলো।
গল্পের মতো দুইজন ঘুরতে বার হয়। নাটকের মতো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজনকে চাপা দেয়। পরিতোষের খুব দোষ নেই, শশধরই দৌড়ে গাড়ির সামনে। ব্রেক চাপতে ক্ষণিকের দেরি।
এসডিপিও হজসন সাহেব পরিতোষের পরিচিত।
আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে?
না।
আপনার সিংহ বাবু কই?
অসুস্থ।
ওনাকে রাজি করান, একথা বলতে যে গাড়ি উনি চালাচ্ছিলেন। নইলে এটা খুনের মামলা। ফাঁসি বা যাবজ্জীবন। আজ রাত আপনাকে থানায় কাটাতে হবে। কাল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সিং সাক্ষ্য দেবে। বড়জোর দুই বছরের জেল।
অনিমা পাঁচ ভরি গয়না আর এক হাজার টাকা নিয়ে রাজনাথের ডেরায় আসে। আকাশে ত্রয়োদশীর চাঁদ। সব শুনে হাসে রাজনাথ।
টাকা লাগবে না মেমসাব। খুশিতে ভাষা হারিয়ে ফেলে অনিমা।
শুধু আজ রাতটা থেকে যাবেন আমার সঙ্গে। কেউ কিছু জানবে না। আমি দুবছর জেলে বসে আপনার কথা ভাববো।
লেখক : সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন