হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রাহ.)
মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রাহ.) উপমহাদেশের এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। আল্লাহর মনোনীত জীবনবিধান ইসলামের প্রচার-প্রসার, হেফাজত এবং চর্চা, অধ্যয়ন, গবেষণা তথা দীন ইসলামকে প্রবহমান রাখার পেছনে যাদের প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ অবদান সবচেয়ে বেশী ছিল, বিগত শতাব্দীর ক্ষণজন্মা মহান পুরুষ হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রাহ.) তাদের অন্যতম। প্রণালীবদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও তিনি জ্ঞান ও আধ্যাত্মলোকের শীর্ষ পর্যায়ে উপনীত হতে পেরেছিলেন। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সর্বভারতীয় সিপাহী বিপ্লবে অংশগ্রহণের ফলে তাকে ভারত ত্যাগ করতে হয়। তিনি চিরদিনের মতো নিজ দেশ ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান এবং বাকী জীবন সেখানেই অতিবাহিত করেন। এ জন্যই তাকে মুহাজিরে মক্কি বলা হয়। মক্কার প্রবাস জীবনে নিঃস্ব ফকিরের মত জীবন-যাপন করেও তিনি দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ভারতের মুসলিমদের মধ্যে যে নবজাগরণের ঢেউ এসে তাদেরকে উজ্জীবিত করেছিল, তাতে হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রাহ.)- এর ব্যাপক ভূমিকা ছিল। ইলমি ও রূহানী চর্চার যে ধারার সূচনা তিনি করেছিলেন, সারা আরব ও আজমে তার ফয়েজ এখনও জারী আছে। উপমহাদেশে এমন আলেমের সংখ্যা বিরল, যার সঙ্গে হাজি ইমদাদুল্লাহ (রাহ.)- এর ভক্তি-শ্রদ্ধার সম্পর্ক অবর্তমান।
হাজি ইমদাদুল্লাহ (রাহ.)- এর নাম ছিল ইমদাদ হুসাইন। হজরত শাহ ইসহাক মুহাজিরে মক্কি একদিন তাকে ইমদাদুল্লা হবলে ডাকলেন। সেদিন থেকে তাকে ইমদাদুল্লাহ নামে অভিহিত করা হয়। ১২৩৩ হিজরি সালের ২২ সফর তার জন্ম। জন্ম সাল হিসেবে তার নাম জাফর আহমদ। তিনি বাহ্যিক ইলম খুব বেশী পড়েন নি।
কাফিয়া জামাত পর্যন্ত পড়ার পর তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত হন। মিয়াজী নূর মুহাম্মদ (রাহ.)- এর হাতে বায়আত হন। তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, এক মজলিসে অনেক আওলিয়ার সমাবেশ। সেখানে রাসুল (সা.) তার হাত ধরে তাকে বায়আত করার জন্য হজরত মিয়াজী (রাহ.)- এর হাতে তুলে দেন। তিনি জাহেরি ইলম বেশী না পড়লেও আল্লাহ তাকে আপন অনুগ্রহে এত ইলম দান করেছেন যে, তৎকালীন বড় বড় আলেম ইলমের বিষয়ে তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি (রাহ.) বলেন, আমার লেখা কিতাবগুলো হজরত হাজি সাহেবকে শুনানোর পর আমি সেগুলোর প্রতি আশ্বস্ত হতাম এবং কিতাবগুলো নির্ভরযোগ্য বলে ভরসা পেতাম। তিনি আরও বলেন, হজরত হাজি সাহেবের ওসিলায় আমরা জানতে পেরেছি যে, শরীয়তের হাকিকতের অপর নাম তাসাউফ। হাজি সাহেব যেমন ছিলেন আরিফ, তেমনি ছিলেন আশিক ও মুআররিফ অর্থাৎ আল্লাহ প্রেমিক এবং প্রমিক সৃষ্টিকারী। তিনি ইলমকে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন।
হাজি ইমদাদুল্লাহ (রাহ.)- এর কতিপয় স্মরণীয় বাণী: ১. পরস্পর ঐক্যের পথ হল, প্রত্যেকে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় মনে করবে। ২. পীরের কাজ হল বীজ বপণ করা। আর মুরিদের কাজ হল তাতে পানি সিঞ্চন করা।
৩. যে নিজে মুজাহাদা বা আমলে কষ্ট স্বীকার করে না, সেরূপ পীরের শিক্ষায় বরকত হয় না। ৪. ওলীর উচিৎ হল, কারও কাছ থেকে কিছু পাবার আশা না রাখা। এ মহা সাধক, ওলী সংস্কারক ১৩১৭ হিজরি ১২ জামাদিউস সানীতে ইন্তেকাল করেন। মক্কা শরীফের ‘জান্নাতুল মুআল্লা’ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।