আল্লাহর জন্য ভালবাসা
মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ
পুরো পৃথিবীজুড়ে মানুষ একমাত্র সামাজিক জীব। সঙ্গহীনতা মানুষের সহ্যের বাইরে। মানুষ এক বেলা না খেয়ে থাকবে, প্রয়োজনে বছরজুড়ে চাহিদামাফিক কাপড় পরবে না; তবুও সমাজ ছাড়া থাকতে রাজি হবে না।
সামাজিকতা মানুষের স্বভাবগত বিষয়। সমাজ বিনে মানুষের স্বাভাবিকতা বিপন্ন হয়। যেমন পানির পরশ ছাড়া মাছের জীবন বিপন্ন হয়। তাই মানুষ সমাজ গড়ে। বাঁচার তাগিদে। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে।
এ সমাজ প্রতিটি মানবজীবনের নির্দিষ্ট চৌহদ্দি। একেবারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। কারো সাধ্য নেই, এর বাহিরে নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করার।
সমাজের বুকে চলার পথে প্রত্যেকেই পরিচিত হয় নানান মানুষের সাথে। সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় কত শত জন। কারো সাথে প্রয়োজনের খাতিরে। কারো সাথে মনের টানে। অনেকের সাথে রক্তসূত্রে। আবার কারো সাথে নিতান্তই সৌজন্যতার প্রতি খেয়াল রেখে।
বলা যায়, সম্পর্কের এ বন্ধনটা পুরো সমাজকে জোড়া লাগিয়ে রাখে। মানুষে মানুষে যদি সম্পর্কের বন্ধন না থাকতো, সমাজ তাহলে বিগড়ে যেত। অজান্তেই বিলীন হয়ে যেত, মনুষত্ব আর পশুত্বের মাঝে থাকা বিস্তর ফারাক।
সম্পর্কের এ বন্ধনকে আমরা অবস্থাভেদে বিভিন্ন নামকরণ করি। যেমন: মাতা-পিতা, সন্তান, ভাই-বোন; স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু ইত্যাদি।
অস্বীকার করার জোঁ নেই, সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় সম্পর্কের বিশাল অবদানকে। তবুও বলতে হয়, মানুষ যখন স্বার্থান্ধ হয়; তখন ছিঁড়ে ফেলে সম্পর্কের এ বন্ধনকে। অনেকে তো কারো সাথে সম্পর্কই করেন, নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। স্বার্থের জন্য সম্পর্ক জোড়া আর ভাঙ্গা, উভয়টিই নিন্দনীয়। ক্ষতিকর সমাজের জন্য। মানুষের জন্য।
মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে অস্তিত্বদানকারী আল্লাহ বিষয়টির নিন্দা বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, এটা মুমিনের বৈশিষ্ট নই। আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসুল। তার অনুসরণকারীরা কাফেরের মোকাবেলায় কঠোর। আর তারা পরস্পরে বিন¤্র চরিত্রের অধিকারী। সুরা ফাতাহ: ২৯
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ সা. মানুষকে উৎসাহিত করেছেন, ভালবাসার এ বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার জন্য। নির্দেশনা দিয়েছেন, সম্পর্কটা যেন দুনিয়ার কোন স্বার্থের জন্য না হয়। বরং একমাত্র আল্লাহর জন্য যেন হয়। হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসুল সা. বলেছেন, যার মাঝে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। এক. আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবচে প্রিয় হবে। দুই. কাউকে কোন স্বার্থের জন্য নয় বরং একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালবাসবে। তিন. আল্লাহ পাক তাকে কুফর থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার পর পূণরায় কুফর গ্রহণ করাকে এ পরিমাণ অপছন্দ করবে, কেউ আগুনে পতিত হওয়াকে যে পরিমাণ অপছন্দ করে। বুখারি: ৬৬০
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল সা. বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করে বলবেন, আমার জন্য পরস্পরে মহব্বতকারীগণ কোথায়? আজকের এই দিনে যখন কোথাও কোন ছায়া নেই, আমি তাদের আরশের ছায়া দান করব। মুসলিম: ২৫৬৬
একই সাহাবি থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল সা. বলেন, ওই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমান না আনবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ তোমরা একে অন্যকে ভালবাসবে না। মুসলিম: ৫৪
তাই আসুন! আমরা দুনিয়ার নিছক কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন সম্পর্ক না করি। বরং সবার সাথে ভালবাসা হোক একমাত্র আল্লাহর জন্য। মজবুত করি আমাদের ভালবাসার প্রতিটি বন্ধনকে। প্রেম ভালবাসার বাহারি রঙ্গে সাঁজিয়ে তুলি সমাজটাকে। পশুর মত স্বার্থান্ধ হয়ে নোংরা না করি সমাজের দৃশ্যটাকে।