অনুশীলন শান্তিদূত-৪ কাল শুরু : অংশ নেবে ২২ দেশের সশস্ত্র বাহিনী
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিংয়ে (বিপসট) বহুজাতিক অনুশীলন শুরু হচ্ছে কাল। অনুশীলন শান্তিদূত-৪ নামে এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। আনুষ্ঠানিকভাবে এ অনুশীলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। গতকাল শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিপসটের প্রধান প্রশিক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইএসপিআর’র পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান, সেনাসদর দফতরের মিলিটারী ইন্টেলিজেন্টস (এমআই) পরিদফতরের কর্মকর্তারা, মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর ক্যাসান্ড্রা গেসেকিসহ উর্ধতন সামরিক কর্তকর্তারা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অনুশীলন শান্তিদূত-৪’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের উপর পরিচালিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন। যা ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১২ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত বিপসটে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ইউএস প্যাসিফিক কমান্ড (ইউএসপ্যাকম) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত গে¬াবাল পিস অপারেশনস্ ইনিশিয়েটিভের (জিপিওআই) পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের উপর পরিচালিত হবে এ অনুশীলন। এখানে শান্তিদূত শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘শান্তির বার্তাবাহক’। তিনি জানান, এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশসহ ২২টি দেশের মোট ১৩১৯ এর বেশী অংশগ্রহণকারী যোগদান করবেন। দেশসমূহ হলোÑঅস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, বসনিয়া-হারজেগভিনা, কানাডা, ফিজি, ঘানা, গ্রেট ব্রিটেন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কর্ঘিজস্তান, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পেরু, ফিলিপাইন, রুয়ান্ডা, সেনেগাল, সিয়েরালিওন, দক্ষিন কোরিয়া, শ্রীলংকা, ইউএসএ এবং ভিয়েতনাম। এর আগেও বিপসটে ২০০২, ২০০৮ ও ২০১২ সালে একই ধরনের অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী একটি স্ট্র্যাটেজিক লেভেল সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিবেশি একাধিক রাষ্ট্রের না থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই অনুশীলনে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমার, ভারত ও চীন নেই। ভারত শেষ মহুর্তে না আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ভারত ও চীনের দুইজন সামরিক কর্মকর্তা প্রশিক্ষক হিসেবে সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, কোন দেশ আসবে বা আমন্ত্রণ পাবে সেটা মূলত ইউএসপ্যাকম ও জিপিওআই নির্ধারণ করে থাকে। বাংলাদেশ কেবল ভেন্যু ও প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহনকারী শীর্ষদেশ সমূহের মধ্যে দ্বিতীয়। আগে প্রথমস্থানে ছিল। তবে অনেক দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম কমে গেছে। এক সময় যেসব দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল সেইসব দেশও এখন শান্তিরক্ষা মিশনে লোক পাঠাচ্ছে।
শান্তিরক্ষার বর্তমান চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ধরণ অনেক পাল্টে গেছে। আগে কেবল পর্যবেক্ষন ও প্রতিবেদন পাঠানোর কাজ করা হতো। এখন তো অনেক শান্তিমিশন এলাকায় আগে ড্রোন দিয়ে নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখে নিয়ে এগোতে হয়। এখন ছোট ছোট দল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালায়, প্রতিকূল আবহাওয়া ও মরুভুমির মত এলাকায় শান্তিরক্ষায় কাজ করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অন্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে নেয়। ফলে এসব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে বিপসটের মাধ্যমে প্রদানকৃত উন্নত প্রশিক্ষন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা পালনে অন্যতম সহায়ক হবে। এই প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ ও সিভিল কর্মকর্তারাও অংশ নিচ্ছে। কারণ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যান্য দেশের অনেক সিভিল লোক নেওয়া হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা নেই বললেই চলে। এ কারণে এবার সিভিলদের সংযুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ একটানা অনুশীলন চলার পর আগামী ১২ মার্চ প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করবেন প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। সম্পাদনা: ইকবাল খান