নূসরাত জাহান : ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুক্তি লাভের দিনটি ভারত স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস এবং ২৬ জানুয়ারি আড়ম্বরপূর্ণভাবে প্রজাতন্ত দিবস পালন করে। তবে এখনো স্বাধীনতার সুখ পায়নি কাশ্মীরের জনগণ। তারা কখনো বিচ্ছন্নতাবাদী গোষ্ঠী, কখনো সরকার, কখনো বা প্রতিবেশী পাকিস্তানের বন্দুকের নলের মুখে থাকে। সূত্র: বিবিসি
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্তি পায় ভারত। একই সঙ্গে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ার পরও কাশ্মীরের একাংশ অর্থাৎ জম্মু ও কাশ্মীর যুক্ত হয় ভারতের সঙ্গে। আর আজাদ কাশ্মীর যুক্ত হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। এ নিয়েই যুগের পর যুগ ধরে চলছে লড়াই। দুই কাশ্মীরই চায় স্বাধীনতা, চায় এক হতে।
স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, জাতপাত, নকশালবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন মাথাচাড়া দেয় ভারতে। ’৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধ হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অরুণাচল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছে। আর ’৪৭, ’৬৫, ও ’৯৯ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ হয়েছে। কাশ্মীর ও সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতাই এ বিরোধের কারণ। সেই বিরোধ এখনো চলছে।
গত মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হন। এরপর কাশ্মীরে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। এ ঘটনা সংঘাতপূর্ণ কাশ্মীরের শান্তি প্রতিষ্ঠার আরেকটি প্রতিবন্ধকতা। যার দায় ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই।
স্বজনহারাদের একজন শ্রীনগরের আবদুল রেহমান মীর একটি বুলেট দেখিয়ে বলেন, ‘এই বুলেটই আমার ছেলে সাব্বির আহমাদ মীরকে মেরে ফেলেছে। তাদের ( সেনাবাহিনী) ছোড়া গুলি, কাঁদানে গ্যাস আর গ্রেনেড আঘাত করে আমার ঘরের জানালায়। তাদের হিংসার আগুনে পুড়ে মরল আমার ছেলেটি।’
সাব্বিরের মতো এমন অনেকেই প্রায় প্রতিদিন মরছে কাশ্মীরে। আর এমনই অবস্থা তাদের পরিবারের। এই ১৫ আগস্ট ভারত জুড়ে যখন চলছিল স্বাধীনতা দিবসের উৎসব সেদিনও কিন্তু অশান্ত ছিল কাশ্মীর। সেদিনও বুলেট কয়েকজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
স্বাধীনতার পর এখনো কাশ্মীরে প্রতিদিনই ‘আজাদি, আজাদি’ সেøাগান শোনা যায়। মুখর হয় দেশবিরোধী সেøাগানে। এখনো কথায় কথায় কাশ্মীরে জারি হয় কারফিউ, শহরে নেমে যায় সেনা ও পুলিশ। স্থবির হয়ে যায় জীবনযাত্রা।
কাশ্মীরের এ সমস্যা নিয়ে বিশ্ব মহলেও চলে উত্তেজনা। এ সমস্যা সমাধানে দুদেশকেই বারবার তাগাদা দেওয়াও হয়। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ আলোচনার টেবিলে গেলেও ফলাফল শূন্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বুলেট নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান করা সম্ভব। নচেৎ দুদেশের জন্যই সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে। সম্পাদনা : সুমন ইসলাম