জাফর ইকবালরা কখনো হারে না!
ওয়াসিম ফারুক
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দেশের জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজের ক্যাম্পাসেই দিনের আলোয়ে শত মানুষের মাঝে ছুরির কোপে ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন । এই হামলায় ব্যথিত, স্তম্ভিত হলেও বিস্মিত হইনি । কারণ, বাংলাদেশে এটা তো আর নতুন ঘটনা নয় । ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সেদিন ও নিজ ক্যাম্পাসের ভিতর ই চাপাতির এলোপাথালি কোপে ক্ষত বিক্ষত করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ । সেই হামলায় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ প্রাণে বাঁচলেও তার কিছুদিনের সেই ক্ষত নিয়ে দুনিয়া বিদায় নিতে হয়েছিল তাকে । তিনি তাঁর ওপর হামলার জন্য ধর্মীয় উগ্রবাদী তথা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছিলেন। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের রক্ত না শুকাতেই ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় একই স্থানে একই কায়দায় জীবন দিতে হয় বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে । অভিজিৎ হত্যার দায় খোলাখুলি ভাবেই স্বীকার করে নেয় আনসার বাংলা-৭ নামের ইসলামিক মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠন । এর ই কিছুদিন পর রাজধানীর শাহবাগে নিজ অফিসে একই কায়দায় খুন হন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন । এছাড়াও আমরা দেখেছি ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস। ২০০৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক এস তাহের, ২০১৪ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক 5রেন । এর পর ও হামলাকারীরা কতটুকু হিং¯্র যে শত শত মানুষের মাঝে দিনের আলোয়ে তার উপর হামলা করতে এত টুকু ও চিন্তা করলো না ? স্বাভাবিক ভাবেই বলতে পারি যে শুধু মাত্র দুই একজনের দুয়েক দিনের পরিকল্পনায় এই হামলা হয় নি । অবশ্যই এই হামলার পেছনে বড় কোন শক্তির হাত আছে । এই ধরনের প্রতিটি হামলার পরই আমাদের রাজনৈতিক ময়দানে শুরু যায় কাঁদা ছোরাছুরির পর্ব । জাফর ইকবালের উপর হামলার পর ও এর ব্যতিক্রম হয় নি সরকারি দলের দাবি সরকার কে বেকায়দায় ফেলার জন্য সরকার বিরোধীদের ইন্দনে এই কাজ হয়েছে আর সরকার বিরোধীদের দাবী বিরোধীদের দমনে সরকারেই ই পরিকল্পনার অংশ ।আর এই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুবাদের পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা । সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বা বিরোধীদল কে ঘায়েল করতে হলে কেন জাফর ইকবালদের উপর হামলা করতে হবে ? সমাজে রাজনীতির আঁচলে লুকিয়ে থাকা বড় বড় সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজদের কে কি তারা চোখে দেখে না ? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মোহ আজ আমাদের রাজনীতিকে আমাদের মুলধারা অনেক দূরে ফেলে দিয়েছে ।
ক্ষমতার জন্য মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলে যেয়ে বার বার মাথা নোয়াচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীদের কাছে । এই সুযোগ কে ই সম্বল করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ই অংশ ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীরা বার বার আঘাত করে যাচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার সপক্ষের মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষদের উপর যেমন ঘটেছিল ১৯৭১ সালে ।
জাফর ইকবাল আমেরিকার নিশ্চিত সুন্দর জীবন ছেড়ে মাতৃভুমির টানে চলে এসেছেন । মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজ্ঞান মনা এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাতে শুরু করেছেন আমাদের তরুন সমাজকে । আমাদের সুন্দর পথে হাটা অনেকেরেই পছন্দ না । কারো কারো চাওয়া আফগানের সেই অন্ধকার কুপ তাই টো কোন এক সময় আমরা বলতে শুনেছি তারা হবে তালেবান আর বাংলা হবে আফগান । এই দেশকে আফগান করার জন্য তারা যতই চেষ্টা করুক জাফর ইকবালদের উপর যতই হামলা করুক তারা কখনো ই স্বার্থক হবে না । জাফর ইকবালদের উপর যতই আঘাত আসুকনা কেন জাফর ইকবালরা কখনো ই হারবে না । যদি জাফর ইকবালরা পরাজিত হয় পরাজিত হবে সমগ্র বাঙ্গালী পরাজিত হবে সমগ্র পৃথিবী ।
লেখক: ওয়াসিম ফারুক, কলামিস্ট/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ