গুলশান,বনানীকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্যোগ রাজউকের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বললেন বিশেষজ্ঞরা
শাকিল আহমেদ : রাজধানীর গুলশান, বনানী,বারিধারা ও বাড্ডা আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্দ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে। তবে রাজউকের এই সিদ্ধান্তকে আতœঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, গুলশান,বনানী,বারিধারা ও বাড্ডা এলাকার আবাসিক প্লটসমুহ ও গুলশান ২ চক্কর হতে উত্তর দিকের এভিনিউ সড়কটি বাণিজ্যিক রুপান্তর করার বিষয়ে ৩/২০১৭ সভায় সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক কর্তৃপক্ষ। ঐ সুপারিশে রাজউকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বর্নিত রাস্তাসমূহের অধিকাংশ প্লটগুলো অননুমোদিতভাবে বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন রাস্তাসমূহের প্লটগুলো বাণিজ্যিক হিসাবে ঘোষণা করলে ইজারা গ্রহিতা ও রাজউক উভয় পক্ষই লাভবান হবে এবং রাজউকের প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। সুপারিশে আরো বলা হয়,গত ২৯ অক্টোবর ২০১৭ তারিখের প্রজ্ঞাপনে বনানী আবাসিক এলাকার ১১ নং রাস্তাটি ২০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখের প্রজ্ঞাপনের অংশ হিসাবে আ-আবাসিক ব্যবহারের অনুমোদন প্রদান করে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যবহারের আনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি কাঠা ৩০ লাখ টাকা হারে কনভারশন ফি আদায় করা হয়। বাস্তব আবস্থায় আ-আবাসিক ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে ইমারত নির্মান বিধিতে স্পষ্ঠ কিছু উল্লেখ্য নেই। আ-আবাসিক ব্যবহারের অনুমতি প্রাপ্ত প্লটগুলো প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। বানিজ্যিক রুপান্তর ফি ৫০ লাখ টাকা হিসাবে ধার্য আছে। এ ক্ষেত্রে কাঠা প্রতি বিশ লাখ টাকা রাজউকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বনানী ১১ নং রোডটি আ-আবাসিক ব্যবহারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক করার অনুমোদন দেয়া যায়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এটি একটি আতœঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে রাজউকের অদূরদর্শিতার কারণে গুলশান ১ থেকে গুলশান-২ ও পুলিশ প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য যে ভাবে ট্রাফিকিং হয় সে ভাবে রাস্তা গুলো বানানো হয়নি। গুলশান,বনানী এলাকায় ঢুকতে ও বের হতে এক ঘন্টা সময় লাগে। এই এলাকার বাসিন্দারা আবদ্ধ জীবন যাপন করে । গুলশান, বনানী বারিধারা মুল পরিকল্পনার ধারণা থেকে সরে আসা হলো বংলাদেশের পরিকল্পিত যাত্রাও যে আতœঘাতী হতে পারে তার প্রমান। পরিকল্পনার দায়িত্ব যাদের হাতে দেয়া আছে তারা অর্থলোভি তাদের হাতে এই নগরী নিরাপদ নয়।
এ বিষয়ে জানতে রাজউকের চেয়ারম্যানকে ফোন করে পাওয়া যায়নি। উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন-১ এর পরিচালক ডাঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে,এখনো কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভালো বলতে পারবে,বিষয়টি তারা দেখভাল করছে। পরিকল্পনা বিভাগের (সদস্য) আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তথ্য আইনে লিখিত ভাবে চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন এভাবে কিছু বলা যাবে না।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, পুরান ঢাকা যেমন রাজধানীর ঐতিহ্য ঠিক তেমনি গুলশান, বনানী ও তেজগাঁও এলাকায় নতুন ঢাকার একটি ঐতিহ্য। কিন্ত আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিককরণের সিদ্ধান্ত কিভাবে নেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে এ ব্যাপারে রাজউক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এর কোন দীর্ঘ পরিকল্পনা নেই। বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। রাজধানী গুলশান ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় প্রতি একরে ৫০ জন মানুষের বসবাসের পরিকল্পনা করা হলেও পরবর্তীতে ৩৮০ জনের বসবাসের অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে এসব এলাকায় প্রায় ৬১২ জন বসবাস করছেন।