ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ জিএসপি প্লাস
স্বপ্না চক্রবর্তী : স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জিএসপি থেকে জিএসপি প্লাসের সুবিধাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন পোশাকশিল্পসহ দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) এক ঘোষণায় বিষয়টিকে আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
সিডিপির ওই ঘোষণা থেকে জানা যায়, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে জিএসপি সুবিধা হারাবে দেশের পোশাক খাত। এ ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের রপ্তানি খাত থেকে আয় হয় ২৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে পোশাক শিল্প থেকেই এসেছে ২০ দশমিক ২৬ ডলার। যা মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ। কিন্তু জিএসপি সুবিধা বন্ধ হলে পোশাক খাতে বড় ধরনের হুমকি নেবে আসবে।
একই কথা বললেন পোশাক শিল্পের অপর সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এবং এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, ২০২৪ সাল নাগাদ দেশ উন্নয়নশীলের কাতারে গেলে সিডিপির জিএসপি সুবিধা বন্ধের ঘোষণাকে আমাদের জন্য অবশ্যই খারাপ খবর। তবে এরই পাশাপাশি সুখবর হবে যদি জিএসপি প্লাস সুবিধা পাই। তবে এটি আদায়ে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, উন্নয়ন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আরো তিন বছর আমরা এই জিএসপি সুবিধা পাব। এতদিনে দেশের অর্থনীতি কোনো অবস্থায় থাকবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তবে ২০২৭ সালের পর এই সুযোগ হারালে আমাদের অর্থনীতিতে একটা ধাক্কা আসতে পারে।
তবে এ ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময়ের সময় তিনি জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে জিএসপি প্লাস পেতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দিলেও ভারতকে এই সুবিধা দেয়নি। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৭ সালে শুধু ইউরোপের বাজারেই তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে রপ্তানির পরিমাণ ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা (ডলারপ্রতি ৮৪ টাকা হিসাবে) রপ্তানি হয়েছে ইউরোপের ২৭টি দেশে। রপ্তানি হওয়া পোশাকের ৬৪ শতাংশই গেছে শুধুমাত্র ইউরোপিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে। ইইউতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিনা শুল্কে রপ্তানির সুবিধা পায়। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেলে এই সুবিধা আর না থাকবে না। তাই এলডিসি উত্তরণের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সম্পাদনা : আনিস রহমান