ফরিদ কবির
নিজেদের নাম দশকতালিকায় দেখার জন্য তাদের একটা দশক লাগেই। দশক থাকলে অনেক সুবিধা। দশ বছর সময়ের মধ্যে যে বিশ-ত্রিশ জন কবি লিখতে এসেছেন তাদের মধ্য থেকে পাঁচ-ছয় জনের একটা তালিকা করে নিজের নাম তাতে ঢুকিয়ে দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করা যায়। তালিকার শীর্ষে নিজের নাম দেখতে পেয়ে অনেকের মধ্যে বেশ অহংকারও জাগে। তখন তারা নানা ফতোয়া দেওয়া শুরু করেন। তারা হুজুরদের মতো কখনও কখনও ফুঁ দেন। সেই ফুঁয়ে বাংলাভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিরাও উড়তে থাকেন। এই কবিরা বেশ উদ্ধত। উদ্ধত তাদের শিষ্যরাও। শক্তিশালী যেকোনো কবিকে নিয়েই তারা সহজে বিদ্রুপ করতে পারেন। তাচ্ছিল্য করতে পারেন। উদ্ধত ও অহংকারী লোক কখনোই কবি হতে পারেন না। এই শ্রেণির কোনো লোককে আমি বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি হতে দেখিনি। তারা আসেনই কবিতার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য। নবীন কবিদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য।
সাহিত্যের অন্য মাধ্যমের লেখকরা দশক নিয়ে মাথা ঘামান না। তাদের কোনো দলও দেখি না। কবিদের আছে বেশ কিছু দল। ভুল বললাম। তাদের আছে অনেক দল। এক দলের কবিরা আরেক দলের কবিদেরকে কবি মনে করেন না। তারা ছোট ছোট ছিটমহল বানিয়ে ভাবেন, তাদের বাইরে আর কোনো কবি নেই।
তারা দল বেঁধে চলেন। দলে একজন নেতাও থাকেন। তাদের কেউ কেউ নবীন কবিদের বইয়ের ফ্ল্যাপও লিখে দেন। কবি হওয়ার লোভে শিষ্যরা তাকেই ঘিরে থাকে। এমন দল পাকানো কিছু কবিকে আমি লেখালেখির শুরু থেকেই দেখে আসছি। বেশ কিছু প্রতিভাবান কবিকেও আমি দল পাকাতে দেখেছি, তারা এরই মধ্যে হারিয়ে গেছেন। একজন কবি তখনই দল পাকান যখন তার নিজের সৃষ্টিশীলতার ওপর আস্থা থাকে না। নিজের সৃজনশীলতা ও শক্তির ওপর যার আস্থা নেই তার পক্ষে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব না। নেতার শিষ্যরাও কবি হতে পারেন না, যতক্ষণ তারা কারোর শিষ্য। কাউকে কাউকে কবির মতো দেখায়। তারাও কবি না।
কবির কোনো দল নেই। থাকা উচিতও না। থাকতে পারে না। তিনিও কোনো দলের না। কবি ঈশ্বরের মতোই একা। সার্বভৌম।
লেখক : কবি / সম্পাদনা : জব্বার হোসেন