জমে উঠেছে নতুন টাকার বাজার
জাফর আহমদ: ঈদ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে রাজধানীর নতুন টাকার জমজমাট কেনা-বেচা। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটক, সেনাকল্যাণ সংস্থা ভবনের সামনের ফুটপাত, গুলিস্তানের ফুটপাত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পুরান ঢাকা শাখা সংলগ্ন ফুটপাতে এই কেনা-বেচা হচ্ছে। চাহিদার ভিত্তিতে নতুন নোটের বান্ডিলের বিপরীতে বিভিন্ন হারে কমিশন দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
সরেজমিনে রাজধানীর এসব নতুন টাকার বাজারে দেখা গেছে, ২ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০ টাকা। ৫ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৮০ টাকা, ১০টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ১০০ টাকা, ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ৮০ টাকা, ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে ১০০ টাকা, ১০০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৭০ টাকা। তবে এ বছর নতুন টাকা নেওয়ার কমিশনের হার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নতুন টাকার সবচেয়ে বড় বাজার। এখানে ২০ থেকে ২৫ জন প্রান্তিক মহিলা দাঁড়িয়ে টাকা বিক্রি করেন। এ পথে কাউকে আসতে দেখলেই ঘিরে ধরেন তারা। এখানে সারা বছরই এসব মহিলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে টাকা বিক্রি করেন। তবে তারা এই নতুন টাকার প্রকৃত ব্যবসায়ী নন। এসব টাকার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী টাকা ব্যবসায়ী। এরা মহাজনের কাছ থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এবং এর বিনিময়ে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত একেক জন মজুরি পান। মহাজনরা সারাদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মচারিদের কাছ থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। এজন্য তাদেরও দিতে হয় বিভিন্ন হারে বাড়তি টাকা। এটিই নতুন টাকার বড় বাজার।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ৩০ থেকে ৩৫ জন খুচরা ব্যবসায়ীকে। তাদের একজন আমির হোসেন। তিনি স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বরিশাল। ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় এসে পড়াশোনার পাশাপাশি দীর্ঘ ৩ বছর ধরে করছেন এই ব্যবসা।
আরেক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। তবে প্রতিযোগিতাও কম নয়। কেউ কেউ কোনো আয়ই করতে পারে না, আবার কেউ ১৫০০ টাকার বেশি আয় করে ফেলে। তবে কেউ কাস্টমার ছাড়তে রাজি নয়। কম করে ১ বা ২ টাকা লাভেও অনেক সময় টাকা বিনিময় করতে হয়। তবে এসব টাকা ব্যবসায়ী মহাজনের পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে টাকা ব্যবসা করে না, তারা মহাজনের কাছ থেকে বিভিন্ন দামে কিনে নিয়ে আসে।
ফুটপাতে টাকা বিক্রি পুরোপুরি নিরাপদ নয় বলেও জানান টাকা ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করার কারণে পুলিশ টাকা-ব্যবসায়ীদের তাড়া করে। পাশাপাশি ছিনতাইকারীর ভয় তো আছেই। মাঝে মাঝে দেখা যায় ছিনতাইকারী চক্র হাত থেকে টাকা ছিনিয়ে দৌড় দেয়।
কলেজ পড়ুয়া আমির হোসেন বলেন, আমরা যে ৫০ বা ৮০ টাকা উপরি (কমিশন) নিই, এতে আমাদের লাভ হয় ১০ থেকে ২০ টাকা। কারণ ব্যাংক আমাদের সরাসরি টাকা দেয় না। ব্যাংকে কিছু লোক থাকে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা উত্তোলন করে। তারপর তারা বিভিন্ন হারে কমিশনে আমাদের কাছে বিক্রি করে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারিদের কাছ থেকে হাত ঘুরে মহাজনদের কাছে টাকা আসে বলে তিনি জানান। তাদের বাড়তি টাকা দেওয়া লাগে। ফলে উপরি নিলেও পুরোটা আমাদের পকেটে যায় না। ২ টাকার ১০০টি নোট ২৩০ টাকা দিয়ে কিনে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয় বলেও জানান আমির হোসেন। তবে সব সময় দাম এক রকম থাকে না। অনেক সময় লাভ ছাড়াই বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। সম্পাদনা: পরাগ মাঝি