হজের সার্বজনীন শিক্ষা ২
আলী আবদুল মুনতাকিম
‘আহকামুল হজ’ এ উল্লেখ আছে ‘প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর যদি কারো কাছে হজের খরচ পরিমাণ সম্পদ জমা হয় এবং শাওয়াল মাস শুরু হওয়া পর্যন্ত তা জমা থাকে, আর সে সুস্থ ও রাস্তাও নিরাপদ থাকে তার ওপর হজ ফরজ হয়ে যাবে। তারপর অন্য কোনো কাজে উক্ত সম্পদ খরচ করে ফেললে তার উপর থেকে হজের ফরজ রহিত হবে না।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ত্রুটিহীন মাকবুল হজের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত। রাসুলুল্লাহ সা. চান তার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করুক। মকবুল হজের মাধ্যমে একজন উম্মত সহজেই জান্নাতে যেতে পারে। ইসলামে হজের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বিধায় তা ইসলামের ৫টি মৌলিক ভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য হজ এবং উমরা পূর্ণরূপে আদায় কর।’ সুরা বাকারা: ১৯৬
রাসুলুল্লাহ সা. অনুস্মরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান ছাড়া আসলেই মানুষের কোনো বিকল্প নেই। হ্যাঁ, বিকল্প আছে, সেটা নড়ক। এখানেই হজের সার্বজনীনতা নিহীত। হজ এমন একটি আনুষ্ঠানিক এবাদত যা একা করা কিছুতেই সম্ভব না। এখানে হজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির সাথে তার পরিবার তার সমাজ এবং তার দেশ জড়িত। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক অংগনে পা রেখে হজ সম্পাদক করতে হয়। যেহেতু হজ সার্বজনীন তাই জান্নাতে সবাই মিলে প্রবেশ করার জন্য হজের মত এবাদত অসীম গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের মৌলিক ৫টি এবাদতের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র, ধরণ ও মৌলিকতা ও মজা রয়েছে। যেমন রোজার এবাদতের চরিত্রটি আল্লাহর চরিত্রের সাথে মিলে যায়। এটি একটি বিস্তারিত আলোচনা যা পরবর্তী পর্বে লেখার ইচ্ছো থাকল ইনশাআল্লাহ।
হজের সার্বজনীনতা প্রসঙ্গে আসা যাক। আপনি হজের নিয়ত করলে ও প্রস্তুতি নিতে থাকলেন এটি ব্যক্তি পর্যায়ের কাজ শুরু এবং যা আপনার হজের শেষ রুকনটি পর্যন্ত ত্রুটিবিহীনভাবে কওে যাওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে। আপনার ছেলে মেয়ে, স্ত্রী তথা পরিবারকে এখানে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে। নতুবা আপনি এগুতে পারবেন না। প্রথমেই পাসপোর্ট এর জন্য ছবি ও কাগজপত্র জমা দেবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়াধীন পুলিশ বিভাগের ছাড়পত্র সাপেক্ষে পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে আপনার পাসপোর্ট আসতে। পাসপোর্ট টি হাতে পেতে প্রতিটি ধাপ যদি সততার সাথে সম্পন্ন হয় তো সবাই সওয়াবের অংশীদার হল। কিন্তু এখানে যদি কিছু দেয়ার বিনিময়ে পাসপোর্ট হাতে পেতে হয় তাহলে অনেকের মাধ্যমেই পাপ সাধিত হল। পাসপোর্টটি পাবার পর যাবে ধর্মমন্ত্রণায়াধীন সংস্থা সমূহের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে অনুমতি তথা ভিসার জন্য। হজ ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত যদি প্রতিটি ধাপ সততার সাথে হয় তাহলে তো সবাই সওয়াব পেলেন। যদি তা না হয় তাহলে গোনাহমুক্ত থাকবেন কি করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধাপের ব্যক্দিগুলো?
ডভসা পাওয়ার পর দেশ থেকে সৌদির মাটিতে পা দেয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দ, বোর্ডিং পাস, বিমানভ্রমণ ও জেদ্দা/মদিনা এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়া পর্যন্ত হজ এজেন্সিগুলো একজন হাজীকে মক্কা মদিনায় পৌঁছাতে কি পরিমাণ বাধা বিঘœ অতিক্রম করেন তা ভূক্তভোগী মাত্রই জানেন। এ ক্ষেত্রে ১ জন ভিআইপি ও কম ঝামেলা পোহান না। তাহলে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তির হজ সম্পন্ন করার জন্য তার পরিবার, সমাজ, দেশের কয়েকটি মান্ত্রণালয় নানাভাবে ভূমিকা রাখে। ভূমিকা পালনকারী প্রতিটি ব্যক্তি সংস্থা যদি সততার সাথে কাজটি করে তাহলে সার্বজনীন সওয়াবের ভাগীদার হওয়া যায়। না হলে সার্বজনীন পাপের ব্যবস্থা হয়। আজ মুসলমানদের দুর্গতি দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় এতবড় একটি সার্বজনীন হজ এবাদতের মাধ্যমে আমরা কী অর্জন করছি।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৌশলী