বন্ধ হোক হয়রানি
প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার পর কর্মসূচি স্থগিত করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। যদিও এখনো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন হয়নি, তবুও সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারা কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠক করেছেন। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন। সেই আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে অপেক্ষা করছে আন্দোলনকারীরা। এটা ঠিক এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্যের পর ঘুরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া। ধরে নিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার কারণেই প্রজ্ঞাপন বিলম্বিত হচ্ছে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আন্দোলন স্থগিত থাকলেও হয়রানি কিন্তু থেমে নেই। নানা কায়দায় আন্দোলন সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। আন্দোলনের সময় থেকেই ছাত্রলীগের মহড়া শঙ্কিত করেছে অনেককেই। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে হলে ছাত্রলীগের হুমকি-ধমকির খবরও নতুন নয়। সুফিয়া কামাল হলে তো তুলকালাম ঘটে গেছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে মধ্যরাতে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। আন্দোলনের তিন সংগঠককে জোর করে রাস্তা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক জল গোলা হয়েছে। নানান স্টাইলের হয়রানি চলছে এখনো। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থীকে হলে ঢোকার মুখে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের এক শিক্ষার্থীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অভিষেক ম-ল নামের সেই শিক্ষার্থী আবার হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেই ক্ষান্ত নয় আন্দোলনবিরোধীরা। ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার ‘অপরাধে’ জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন আহমেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিচ্যুতির কারণ হিসেবে এই অপরাধটির কথা উল্লেখ করা হয়নি। কোথাও প্রকাশিত হয়নি এমন একটি লেখা চৌর্য্যবৃত্তির পুরনো অভিযোগ সামনে এনে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অভিযোগের ধরন দেখে নেকড়ে আর মেষশাবকের গল্পটি মনে পড়ে গেল। নেকড়ে মেষশাবককে খাবে এটাই আসল কথা। সে পানি ঘোলা না করলে তার বাবা করেছে। নাসিরউদ্দিনের চাকরি খেতে হবে এটাই আসল কথা। অজুহাত একটা বের করা কোনো সমস্যা নয়। নাসিরউদ্দিন আহমেদকে আমি চিনি না। তবে যতটুকু শুনেছি, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্র থাকার সময় থেকেই তিনি বন্ধু-বান্ধবদের বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরুর পর থেকেও তিনি তার বিবেচনায় সকল যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে থেকেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও তিনি ছাত্রদের পাশেই ছিলেন। আমি কোটার পক্ষের লোক। কিন্তু কেউ কোটার সংস্কার চাইলেই তাকে হয়রানি করতে হবে, চাকরি খেতে হবে, এটা অন্যায়। যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক আন্দোলন করার, সে আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার অধিকার সবারই আছে। নাসিরউদ্দিনকে পুনর্বহালের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন করছে, ধর্মঘট করছে। তার মানে ছাত্ররা তাকে ভালোবাসে। এমন একজন ছাত্রবান্ধব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তাকে পুনর্বহালের দাবি জাানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী যেখানে দাবি মেনে নিয়েছেন, সেখানে আন্দোলনের পক্ষের লোকজনকে নানান অজুহাতে হয়রানি করা অমূলক, অন্যায়। অবিলম্বে কোটা সংস্কার সমর্থকদের সব ধরনের হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএননিউজ
ঢ়ৎড়নযধংয২০০০@মসধরষ.পড়স