স্যাটেলাইট ক্লাবের সদস্য হিসেবে নতুন যুগে দেশ : প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মর্যাদা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ সফলভাবে মহাকাশে পাঠানোর জন্য দেশবাসিকে শুভেচ্ছা জানাই। দেশের অব্যাহত অগ্রগতির পথে এটি একটি নতুন মাইলফলক যোগ করবে। সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা মহাকাশে উড্ডয়ন করায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হিসেবে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (এনআইএএনইআর)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই নতুন স্যাটেলাইট বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তাজাকিস্তান ও কাজাকিস্তানসহ গোটা অঞ্চলের যোগাযোগ সুবিধা দিতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করেছিলেন যে, বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বজায় রাখা ছাড়া দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূউপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ তথ্য ও ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে বহিঃবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
প্রধানমন্ত্রী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের পরপরই ফ্লোরিডায় থাকা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টার সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাদের সকলকে অভিনন্দন জানান। রাতে কথোপকথনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্যোগটি আজ মহাকাশ কক্ষপথে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পেল। তিনি বলেন, দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, কারণ তারা আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়েছে। জনগণ আমাদের সমর্থন দেয়ায় আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি এবং দেশের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ সকল কার্যক্রম গ্রহণের কারণেই বাংলাদেশ মহাকাশে স্থান করে নিতে পেরেছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে বাংলাদেশ শুধু বিনোদনের ক্ষেত্রেই সুফল ভোগ করবে না, এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্য লাভেও সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে আমরা পার্বত্য ও দ্বীপাঞ্চলের মতো দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের ভাড়া থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক মডার্ন মেশিন এখন, সেগুলো চালানোর মত বা সেগুলি রিডিং করার মত বা সেগুলিকে দেখার মত সেই ধরনের স্কিলড মানুষ তৈরি করা প্রয়োজন। সেখানে কি করতে হবে, আমার মনে হয় আপনারা সেভাবেই ব্যবস্থা নেবেন। আপনারা উদ্যোগ নিয়ে কি করতে হবে বলেন, আমরা করে দেব। কোন অসুবিধা নাই, আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বিষয়টার সুরাহা হওয়া দরকার নইলে আমাদের একজন কেউ রোগী হলেই দৌঁড়াতে হবে সিঙ্গাপুর দৌঁড়াতে হবে ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া অমুক জায়গায়, কেন? আর তারা ভালভাবে যদি পারে, আমরা কেন পারবো না। এই প্রশ্নটাই বারবার আমার মনে হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কোইকা সহ-সভাপতি কিয়াংগুন সুল, কোইকার সাউথ এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর মহাপরিচালক ইয়ো ইয়ং কিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে রোগীর তুলনায় ডাক্তার ও নার্সদের অপ্রতুলতার বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েই ডাক্তারদের একটু সংযত হবার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আপনাদের একটু সংযত হতে হবে। দিনের বেলা সরকারি চাকরি করবেন। আর রাতে গিয়ে প্রাইভেট করবেন তারপরতো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হবে, সেটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় আপনারা একটু হিসেব করে, যতটা ধারণ করতে পারেন ঠিক ততটাই করবেন।
অনুষ্ঠানে মুগদায় নার্সিং ইনস্টিটিউট হওয়ার প্রেক্ষিতে সেখানে একটি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী দাবি তুললে প্রধানমন্ত্রী সাবের চৌধুরীকেই এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আহবান জানান।