রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের সঙ্গে থানা পুলিশও মাঠে
সুজন কৈরী : রোজায় রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। আর এ কারণে তাদের পাশাপাশি থানা-পুলিশও মাঠে নামানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমজান মাসে একই সময়ে অফিস চালু হওয়া, ইফতারের আগমহূূর্তে ব্যবসায়ী ছাড়া সব মানুষের বাসায় ফেরার ব্যস্ততা থাকায় এ সময়টিতে রাজধানীর প্রতিটি সড়কেই প্রচুর যানবাহনের চাপ থাকে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। এছাড়া সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের এক পাশে চলাচলরত যানবাহনের তুলনায় অন্যপাশে তার দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করায় যানজট বাড়ে। তাছাড়া বাসস্ট্যান্ড, বিপনি বিতানসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন পার্ক করে রাখার ফলেও যানজট বাড়ছে। উল্টোপথে যানবাহন চলাচলের কারণেও সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সোমবার সরেজমিনে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, হাইকোর্ট, শাহবাগ, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, পান্থপথসহ বেশকিছু সড়কে গিয়ে যানজটের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর থেকে যানজটের পরিমাণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রতিটি সড়কেই গাড়ির বড় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। কোথাও কোথাও সড়কের দুই পাশ জুড়েই যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে।
হাইকোর্ট এলাকায় ঢাকা পরিবহন থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন তোরাব মিয়া নামের বাসটির এক যাত্রী। তিনি বলেন, আমি খিলক্ষেত যাবো। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হাইকোর্টের সামনেই গাড়িতে বসে আছি। যতক্ষণ সময় ধরে গাড়ি জ্যামে আটকে আছি ততক্ষণ আমি হেঁটে বাসায় চলে যেতে পারতাম। শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহন থেকে হাফ ছেড়ে নেমে আসা নারী যাত্রী তানিয়া বলেন, জ্যামে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়। ঘণ্টা খানেক হলো জ্যামে বসে আছি। একটু সামনেও যায় না আবার গরমে বসেও থাকা যায় না। তাই পায়ে হেঁটে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কারওয়ানবাজারে প্রজাপতি গুহার সামনে থেকে গাড়ি থেকে নেমে ইফতার কিনছিলেন মো. হালিম। তিনি বলেন, আমি একটি প্রাইভেট ব্যাংকে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করি। বাসা ধানমন্ডির শংকরে। জ্যাম না থাকলে বাসায় যেতে যেখানে মাত্র ৪০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গেলেও জ্যামের মধ্যে আটকে আছি। ইফতার কেনা প্রসঙ্গে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, বাসায় গিয়ে ইফতার তো আর করতে পারবো না। তাই নিজের জন্য ইফতার কিনলাম। জ্যামে বসে খাবো।
সড়কগুলোতে দায়িত্বরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রমজানের পূর্বে যানজট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলেও রমজান মাসে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যানজট নিয়ন্ত্রণে সময় ব্যয় করতে গিয়ে করা যাচ্ছে না মামলা। এছাড়া আট ঘণ্টার বদলে ডিউটি করতে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত।
পান্থপথ সিগনালে কর্তব্যরত একজন সার্জেন্ট জানান, কী বলব ভাই, রোজা শুরু থেকে আজ (গতকাল) পর্যন্ত গাধার মতো পরিশ্রম করেও পেরে উঠছি না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমরে, হাঁটুতে তীব্র ব্যথা অনুুভব করছি। ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার সুযোগটিও পাচ্ছি না। সবাই চায় আগে যেতে, এই প্রবণতা থেকে কেউ কেউ সিগন্যাল অমান্য করে। এ কারণে যে যানজটের সৃষ্টি হয়, সেটা খুবই বেমানান। কাউকে ধরে যে মামলা দেব, বাস্তবতার জন্য সেটাও সম্ভব হয় না। মামলা দিতে গেলে ১০ মিনিট লাগেই, কিন্তু ততক্ষণে যে জটলা লাগবে, সেটা সামলাবে কে? অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ভাই যানজট এড়াতে অনেক সময় ইফতারও সময় মতো খাওয়া হয়ে উঠে না। সড়কেই দাঁড়িয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইফতার খেতে হয়। তবে এ সময় যানজট অনেকটা কম থাকে।
এদিকে ইফতারের আগমুহূর্তের যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন থানা পুলিশকেও সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতিটি মোড়সহ অলি-গলিতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে পুলিশকে। জাহাঙ্গির নামের এক কনস্টেবল বলেন, রমজানে যানজট বাড়ে। বিশেষ করে ইফতারের আগে। তাই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করছি।
ট্রাফিক উত্তরের সিনিয়র এসি আবু ইউসুফ বলেন, অন্যান্য সাধারণ দিনের তুলনায় রমজানে যানজট বৃদ্ধি পায়। তবে পুলিশও এ সময়টিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এছাড়া সড়কে দোকানপাট বসানোর কারণেও যানজট বৃদ্ধি পায়। যানজট নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে মার্কেট, পেট্রল পাম্প, বাস মালিক সমিতির লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা যে যার মতো করে সহযোগিতা করছেন। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের ক্রাইম বিভাগের সহযোগিতায় ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণেও সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও। পুলিশ সাধ্যমতো যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
আবু ইউসুফ বলেন, রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের চার জোনের ডিসি, এডিসি স্যারসহ অন্য কর্মকর্তারা কোথায় কোথায় থাকবেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ীই কাজ করছি। অপর এক প্রশেরœ জবাবে তিনি বলেন, উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অভিযোগে আমারা চালকদের আটক করে মামলা দিচ্ছি। এছাড়া গাড়িও জব্দ করে রেকারিং করা হচ্ছে। বর্তমানে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল কিছুটা কমেছে। সম্পাদনা: উম্মুল ওয়ারা সুইটি