রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সহায়তা আনতেও প্রয়োজন জোর কূটনৈতিক তৎপরতা
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থের প্রয়োজন ৯৫১ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে বাংলাদেশ এই সহযোগিতা বাবদ জাতিসংঘ থেকে পেয়েছে ৪’শ মিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ৯৫১ ডলার সহায়তার আবেদন করেছে। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হলে সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, গত বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ঢল নামলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো এবং দাতা সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হতে থাকে। মিয়ানমারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। ফলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসের জন্য ৯৫১ মিলিয়ন ডলার জরুরি অর্থ সহায়তার আবেদন করে।
এ নিয়ে রোহিঙ্গা গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে অনেকটাই সফল বাংলাদেশ। যদিও বোঝা যাচ্ছে সহসাই এই সমস্যার সমাধান হবে না। তাই এখন জরুরি হয়ে পড়েছে আর্থিক সহায়তা। তাই সরকারকে এই ব্যাপারেও জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে। সহসাই এই সংকটের সমাধান হবে না। ১০ কেন ১০ বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ হবে না। তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীর এই বিশাল চাপের কারনে দেশ দীর্ঘমেয়াদী বড় তিন ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এগুলো হলো সামস্টিক অর্থনীতি, সামাজিক ও পরিবেশ বিপর্যয় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। তাদের পরামর্শ, প্রত্যাবাসন জরুরি। রোিহঙ্গারা যতদিন থাকবে ততই আর্থিকসহ নানা ক্ষতি বাড়বে। দেশকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে। বিশেষ করে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়কে বড় করে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এমনকি এসব রোহিঙ্গাদের ভরনপোষন ও খাদ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজন সংকুলানে ভবিষ্যত অর্থ সংকটের আশঙ্কাও করছেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে সূত্রগুলো বলছে, এ বছরের মার্চ থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ মাসের জন্য ৯৫১ মিলিয়ন ডলার জরুরি অর্থ সহায়তার আন্তর্জাতিক আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত ১৬ মার্চ জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম দফায় ৪৩৪ মিলিয়ন ডলারের আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। ওই দফায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার বিশ্বজুড়ে নানা সংকটের কারণে এই দফায় রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্যদাতাদের আগ্রহের ঘাটতি এবং অর্থপ্রাপ্তির গতি শ্লথ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এই রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক, পরিবেশসহ অন্যান্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি’র) নির্বাহী পরিচালক এবং অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে যে রোহিঙ্গারা এসেছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে। সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতিও রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতিটা খুব সহজেই হিসাব করতে পারি। চোখে পড়ে। অন্য ক্ষতিগুলো পরোক্ষ হিসেবেই আসে। সবগুলো যদি এক সাথে দেখি তা হলে কিন্তু বিরাট প্রভাব পড়ছে। প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে ও সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। জেনেভা চুক্তি অনুযায়ি সেখান থেকেও অর্থ এসেছে। এখন আবার নতুন করে জাতিসংঘ হিসেব দিয়েছে তাদের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসের জন্য ৯১০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। এই অর্থের যোগান দেওয়া সরকারের জন্য বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, যখন যে দেশে শরনার্থীরা যায়, তখন প্রথমদিকে দাতা সংস্থা ও সরকারি যে সংস্থাগুলোর যে উদ্যোগ থাকে, সেটা কিন্তু আস্তে আস্তে স্তিমিত হতে থাকে। এক ধরণের স্থবিরতা আসে। তখন যে দেশে আসে সেই সরকারকেই দায়ভার নিতে হয়। সেই সরকারের খরচ করতে হয়। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই তাদের বাসস্থানের জন্য জায়গা দিয়েছে ও বাসস্থান তৈরি করে দেওয়ার জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে এটাই সর্বশেষ খরচ। আগামী বাজেটেও তাদের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এটা তো স্বাভাবিকভাবেই চাপ।