একজন কথিত ‘জঙ্গি’র জন্য বলছি!
সাহেদ আলম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যখন ফাইজুল্লাহ ফাহিমের ছবি দিয়ে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে জঙ্গি বানিয়ে দিল, তখনই বলতে চেয়েছিলাম, আপনি ভুল করছেন মাননীয় মন্ত্রী, এখনই তাকে জঙ্গি বলার সময় হয়নি। কলম সংবরণ করে দেখতে চেয়েছি তার গতি প্রকৃতি। আর বেশ কয়েকজনের মতামত পড়েছি ফেসবুকে। একজন শ্রদ্ধেয় শওকত আলী সাগর, তিনি বলছিলেন, তাকে পাকড়াও করার কারণে এলাকাবাসীকেই কিনা পুলিশ রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা দেওয়ার মামলা ঠুকে দেয়! আরেকজন পিনাকী দাদা। তিনি কোনোরকম ভনিতা না করেই অনুরোধ রেখেছিলেন, ফাহিমকে যেন ক্রসফায়ারে না দেওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত তাই দেওয়া হলো। বাংলাদেশের একজনও মানুষ কি বিশ্বাস করে ফাহিম বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে? একজন পুলিশসদস্যও কি বিশ্বাস করে সেটা?
এতদিন পর্যন্ত যেসব খুন হচ্ছিল, তার কোনো পেছনের মানুষকে সামনে দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেনি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফারজানা কবির লিখেছিল, দেখতে তো অবিকল মানুষের মতো! আসলেই তো! যে মধ্যরাতে অশ্বারোহীরা একের পর এক মায়ের বুক খালি করছে তারা কেমন? কি তাদের বিশ্বাস! কি তাদের উদ্দেশ্য! কোনো ক্লু¬ কি পাচ্ছিলাম আমরা? এই ফাহিম প্রথমবারের মতো সে সুযোগ এনে দিল। আর তাকে আমরা তথ্যভা-ার গায়েব করে দিতেই হত্যা করলাম?
এই ফাহিম জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র ছিল, মেধাবী ছিল। আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে আমার বাচ্চাটা যেমন আমার চুল ধরে টানে, গড়াগড়ি খায়, ফাহিম নিশ্চয়ই তেমন কোনো পিতা-মাতার ঘরেই বড় হয়েছে। তার বন্ধুরা, মা বাবা জানলো না, জিপিএ-৫ পাওয়া ভালো ছেলেটা কিভাবে কুপিয়ে মানুষ মারতে গেল! আর রাষ্ট্র তাকে পেয়ে জবাই দিয়ে দিল। পাছে না হাটে হাড়িটা ভেঙে ফেলে কেউ!
কাক যখন গাছের মগডালে থেকে পায়খানা করে সে ভাবে তার পশ্চাদদেশ তো কেউ দেখছে না। কিন্তু আসলেই তো সেটা নিচের মানুষ দেখে। আমাদের মাথার উপর যারা আছেন তারা দিনের পর দিন কল্পকাহিনী বানিয়ে যাচ্ছেন, তারা ভাবছেন, আমরা দেখছি না। জানি না আরও কত মায়ের বুক খালি করার অপেক্ষায় আছে ফাহিমেরা আর তার হত্যাকারীরা।
লেখক : নিউইয়র্ক প্রবাসী, সাংবাদিক
সম্পাদনা : জব্বার হোসেন