দেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের সাথে বাড়ছে আয়বৈষম্য
ডেক্স রিপোর্ট: দেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের সাথে বাড়ছে আয়বৈষম্য। আর এতে উত্তরের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার এখন ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চেয়ে তিন গুণ বেশি।তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্য বেশি ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগের। জেলাগুলো কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট।উত্তরবঙ্গের একটি অংশে নতুন করে দারিদ্র্যের তীব্রতা ফিরে এসেছে। তালিকায় থাকা অন্য জেলাগুলো বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও মাগুরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ আয় ও ব্যয় খানা জরিপ এবং দারিদ্র্য মানচিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপ বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে উত্তরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা গরিব পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সহায়ক হচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের দারিদ্র্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মঙ্গা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা ছিল, তাতে বড় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তবু কেন ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য বাড়ছে, এটা একধরনের ধাঁধার মতো। ৬ থেকে ৭ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি পরও কেন ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য কমছে না? তাই প্রবৃদ্ধির ধরন নিয়ে প্রশ্ন আসছে। দেখা যাচ্ছে, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিনিয়োগের ফলে প্রাথমিকভাবে এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এই রাস্তাঘাট ব্যবহার করে নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। এসব বিষয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
রংপুর ও রাজশাহীর হাল
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে প্রায় ২৯ শতাংশ হয়েছে। এর মানে হলো রাজশাহী অঞ্চলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি।
রংপুর বিভাগে মোট আটটি জেলা আছে। ছয় বছরের ব্যবধানে কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাটের দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে আগে ছিল ৩৮ শতাংশ, এখন হয়েছে ৬৪ শতাংশ। কুড়িগ্রামে ৬৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। আর লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ হয়েছে। বিভাগের অন্য পাঁচটি জেলায় দারিদ্র্য পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি,২-৩ শতাংশের মতো দারিদ্র্য কমেছে। দারিদ্র্যের হার এখন রংপুরে ৪৪ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও নীলফামারীতে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে ২০১০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে দারিদ্র্য পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত আছে। তবে জেলাওয়ারি দারিদ্র্যের বেশ উত্থান-পতন হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় দারিদ্র্য বেশ কমেছে, আবার কোনো জেলায় দারিদ্র্য বেশ বেড়েছে। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় দারিদ্র্য অনেক বেড়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে নওগাঁ জেলায় দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৩২ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।আবার কমতির হিসাবে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলায় প্রায় ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে দারিদ্র্যের হার এখন ২০ শতাংশ। এ ছাড়া এই বিভাগের অন্য জেলা নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাটে ৩-৪ শতাংশীয় পয়েন্ট দারিদ্র্য কমেছে। প্রথম আলো