সবাইকে তুষ্ট করে ভোটের বাজেট অর্থমন্ত্রীর
বিশ্বজিৎ দত্ত: আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একারণে সরকারের লক্ষ্য ছিলো জনগণের সামনে সাধ্যাতীত সাধ উপস্থাপনের। এই সাধ নিয়েই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুুল মুহিত। এই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়হীন বাজেটের সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন বাজেটে আয়ের যে কথা বলা হয়েছে তা অর্জিত হবে না, আবার যা বরাদ্দ থাকবে তা খরচও করতে পারবে না।
গতকাল দুপুর সাড়ে বারটায় জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবটি করেন তিনি। শারীরিক অসুবিধার কারণে বসে থেকে ও মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে বাজেটে প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। এসময় পাশে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন তথ্যসূত্র ধরিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বাজেট উপস্থাপনায় সহায়তা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে, ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ৯ হজাজার ৭২৭ কোটি ও করবহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এই আয়ের পরেও প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি থাকবে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন দিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পাবলিক ট্রেডে কোম্পানিগুলোর কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। তবে নন পাবলিক ট্রেডের কোম্পানিগুলোর কর হার আগের মতোই রাখা হয়েছে। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের নি¤œতম করহারে কোনো ধরনের পরিবর্তন করা হয়নি। আগের মতোই ন্যূনতম করসীমা আড়াই লাখ টাকা রাখা হয়েছে। তবে সামাজিক সমতার জন্য ধনী লোকদের উপর সারচার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের করহার ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাবলিক লিমিটেড ও গ্রীন কারখানার মালিকদের সাড়ে ১২ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। ভার্চুয়াল ব্যবসায় যারা করেন তাদের উপর করারোপের একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। ডে কেয়ার হোম কে করমুক্ত ও যেসব হাসপাতাল প্রতিবন্ধি বান্ধব নয় তাদের উপর ৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। মূল্য সংযোজন করের ক্ষেত্রেও সরকার অনেকটা ছাড়া দিয়েছে। আগের ৯টি ভ্যাট স্তরকে হ্রাস করে ৫টিতে নামিয়ে এনেছে। সর্বোচ্চ ভ্যাট স্তর করা হয়েছে ১০ শতাংশ। শুল্কায়নের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে সরকারের রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। কর কমিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে আয় কোথা থেকে হবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেটে বলেন, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও কোম্পানি কর কমানোর ফলে করদাতারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কর দিবেন। তা ছাড়া কর ফাঁকি রোধ ও আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণে অনেক করদাতা করের আওতায় আসবেন। তিনি আশা করেন প্রস্তাবিত বাজেটে যে রাজস্ব প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা আগামীতে অর্জিত হবে।
খরচের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সামাজিক অবকাঠামো খাতে ব্যয় হবে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মানব সম্পদ বিশেষ করে শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় রাখা হয়েছে বাজেটের ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অবকাঠামো খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। কৃষিখাতে ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। যোগাযোগখাতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যয় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে বয়স্ক ভাতা ভোগীর সংখ্যা, ৩৫ লাখ থেকে ৪০ লাখ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের লোকদের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছ। বিধবা ভাতা ভোগীদের সংখ্যা, ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখ করা হবে। প্রতিবন্ধি ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবস ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আবার প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশের কর্মীরা দেশ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বাজেট প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নিজস্ব জনশক্তির জন্য উৎপাদনশীল শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের কৌশলের কথা বলেন।
তবে এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধির উপরই বেশি জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে নানা মত থাকলেও উন্নয়নের জন্য প্রবৃদ্ধিই শেষ কথা। আমরা আগামীদিনে প্রবৃদ্ধিকে সুসংহত ও টেকসই করবো। সর্বশেষে তিনি আগামী নির্বাচনের ঈঙ্গিত দিয়ে বলেন, দেশের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার কারো সাধ্য নাই। এখন প্রয়োজন সুযোগ্য নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা।