৮ বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তি হয়েছে: অর্থমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান সম্রাট: বিদ্যমান বাজার অর্থনীতির আওতায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহের তারল্য ও বিনিয়োগের সুযোগের উপর ভিত্তি করে প্রতিযোগিতামূলকভাবে আমানত ও ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করছে। এ বিষয়ে সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকার হস্তক্ষেপ করে না। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম সানজিদা খানমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ বছরে
৫৫ হাজার ৬৮৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ৫শ’ ৬৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের ৭৩৩টি ঋণ ও অনুদান চুক্তি হয়েছে।
সুদ হার নিয়ে তিনি বলেন, সরকারি, বেসরকারি তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত ২০১৮ সালের মে মাসের আমানতের সুদ হারের বিবরণী হতে দেখা যায় যে, ব্যাংকগুলো সঞ্চয়ী আমানতের উপর সর্বনি¤œ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ, মেয়াদী আমানতের ওপর সর্বনি¤œ ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদ এবং স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিটের উপর সর্বনি¤œ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ সুদ প্রদান করেছে।
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সর্বমোট ৭৩৩টি চুক্তি হয়েছে। তারমধ্যে ২৬৩টি ঋণ চুক্তি এবং ৪৭০টি অনুদান চুক্তি। এসকল চুক্তির সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৬৮৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ৫শ’ ৬৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। তারমধ্যে ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ৩৬১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন বা ৫ হাজার ৩৬ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ৫ হাজার ৩২২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বেগম উম্মে রাজিয়া কাজলের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিশ্বব্যাংক লো ইনকাম কমিউনিটি হাউজিং সাপোর্ট প্রকল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। এলক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৩০ জুন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি জানান, নি¤œ আয়ের মানুষের উন্নত আবাসন তৈরিতে বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা করছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্যে হলো দুটি সিটি করপোরেশন ও একটি পৌরসভা এলাকার ১৯টি কমিউনিটিতে দরিদ্র বস্তিবাসীদের জন্য আবাসন তৈরিতে সহায়তা, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, রাস্তা-ড্রেন নির্মাণ ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সরকারি দলের বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি দেশ ও সংস্থার সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্য এইড ও গ্রান্ট বাবদ মোট ৪০৪ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি (কমিটমেন্ট) সম্পাদন হয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে পাওয়া গিয়েছে (ডিসবার্সমেন্ট) ৪৫৯ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমিটমেন্ট ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ডিসবার্সমেন্ট ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কম হয়েছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও জানান, দেশে একটি আধুনিক, দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে ই-কমার্স লেনদেনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পেমেন্ট এগ্রিগেটর বা মার্চেন্ট পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান এবং ই-ওয়ালেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের লাইসেন্স প্রদানকরা হচ্ছে। এছাড়াও ইলেকট্টনিক লেনদেন ব্যবস্থার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।