‘মিয়ানমারের অপ্রকাশিত অনীহা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাধা সৃষ্টি করেছে’
আশিক রহমান : মিয়ানমারের অপ্রকাশিত অনীহা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাধা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ওয়ালিউর রহমান। আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অপ্রকাশিত অনীহা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মনে হয় একটা বাধা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে সমস্যাটি দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। একজন অতি আশাবাদী মানুষ হয়েও দেখতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের পিছুটান অথবা স্থিতবস্থার মধ্যে আছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
তিনি আরও বলেন, এই অবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় কী হতে পারে? সমগ্রবিশ্ব এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বেশ নিয়ে চিন্তিত। বিশেষ করে ভারত-চীন-রাশিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমরা জানি, একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস মিয়ানমারের সামরিক জান্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় এবং অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি, হেগ) কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গা সমস্যার মীমাংসা করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কাছে জানতে চেয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওয়ালিউর রহমান বলেন, জেনেভা কনভেশন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজ্যুলেশন অনুযায়ী আলোচনা করলে অনেককিছু এসে যায়। একটি জাতি-গোষ্ঠীকে কীভাবে নিধন করার উদ্দেশ্যে সিস্টেমেটেক্যালি তার জন্মভূমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এ নিয়ে অবশ্য আমাদের মধ্যে বিতর্ক, আলোচনা হতে পারে। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে সদিচ্ছা দেখাতে হবে। কথায় নয়, কর্মকা-ের মাধ্যমে তাদেরকে তা প্রমাণ করতে হবে যে নিজেদের নাগরিক ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বেশি করে ফিরিয়ে নিতে হবে। এবং একইসঙ্গে পুনর্বাসিত করতে হবে, তা না হলে মিয়ানমারের আন্তরিকতার প্রশ্নটি রয়েই যাবে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন কোনোভাবেই বিঘিœত না হয় প্রয়োজনীয় সেই ব্যবস্থাও সরকার নিচ্ছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের নয়, সারাবিশ্বের। এ সমস্যার প্রকৃতচিত্র সরোজমিনে দেখতে এ মাসেই আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট, তাদের এ সফর ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে আমাদের। তারা যেন বিশ্বের কাছে আরও বিশদভাবে সবকিছু তুলে ধরতে পারে, সে দুটি প্রধান সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সরোজমিনে নিয়ে দেখাতে হবে কী কী সমস্যা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সব মানবিক মানুষ ও রাষ্ট্রের নৈতিক চাপ রয়েছে মিয়ানমারের উপর। আমরা দেখতে চাইÑ মিয়ানমার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। একইসঙ্গে আন্তরিক উদ্যোগে তাদের দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের অতিসত্তর ফিরিয়ে নেবে। রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য সমস্যা বটে। তারা শুধু আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে সমস্যা বা বাধার সৃষ্টি করছে না, জাতীয় বাজেটের উপরও বেশ খানিকটা চাপ সৃষ্টি করেছে।