দুর্নীতি কমাতে হচ্ছে স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ আইন, থাকছে জেল-জরিমানা
তরিকুল ইসলাম সুমন: দুর্নীতির একটি অন্যতম কারণ স্বজনপ্রীতিকে চিহ্নিত করেছে দুদক। আর এই স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা সম্ভব হলেই দুর্নীতি অনেক কমে যাবে বলে মনে করছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ থেকেই সরকারি প্রকল্পসহ অন্যান্য কাজে স্বজনপ্রীতি বন্ধে আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানাগেছে, ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা আইন’ শিরোনামে একটি আইনের খসড়া যৌথভাবে তৈরি করেছে আইন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জনস্বার্থে এটি পাসের সুপারিশ করে খসড়াটি দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধের ভাবনা থেকে দুদকই প্রথমে আইনের খসড়াটি তৈরির জন্য আইন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছিল। আইনের খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে দুদক চেয়ারম্যান ও দুদকের আইন শাখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সরকারের বড় বড় প্রকল্পে ঠিকাদার বাছাই, নিয়োগ ও কার্যাদেশের ক্ষেত্রে খসড়া আইনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সরকারের যে কোনো প্রকল্প ও ঠিকাদার বাছাই কমিটি মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়েই গঠিত হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে ওইসব কমিটিতে সরকারের বাইরে এক বা একধিক বিশেষজ্ঞকেও নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরেও স্বজনপ্রীতির কারণে সঠিক ও প্রকৃত প্রতিষ্ঠান কাজ পায় না। ফলে নানা ধরণের দুর্নীতি ও অনৈতিন লেনদেনসহ নানান ধরণের ফাঁক -ফোকর তৈরি হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্যরা নিয়োগ ও কাজ পায়। এ কারণে কাজও মানসম্পন্ন হয় না। স্বজনপ্রীতি না হলে যোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ পাবে, কাজ পাবে। কাজও হবে মানসম্পন্ন। এতে দুর্নীতির সুযোগ সংকুচিত হবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের কোনো বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ সংশ্নিষ্ট প্রকল্পের টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। এদের মধ্যে কেউ অংশ নিলে স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে এই স্বজনপ্রীতিই ভয়াবহ দুর্নীতিতে রূপ নেয়। বর্তমানে প্রকল্প ও সরকারি স্বার্থসংশ্নিষ্ট কাজে স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে অবাধে। এতে জনগণের করের টাকা তসরুপ হচ্ছে। স্বজনপ্রীতির কারণে সরকারের বড় বড় প্রকল্পের কাজে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একই কারণে প্রকল্প বা অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-বিধানগুলো প্রয়োগ হয় না। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। দুর্নীতি রোধ করারও কেউ থাকে না।
সরকারের কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠজনরা টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না- এই বিষয়টি খসড়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। স্বজনদের মধ্যে কেউ অংশ নিলে কমিটি থেকে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাকে সরে আসতে হবে। স্বেচ্ছায় কমিটি থেকে সরে না এলে ওই কর্মকর্তা ও টেন্ডারে অংশ নেওয়া ওই ব্যক্তি উভয়েই স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
খসড়ায় আরও বলা হয়, আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ৬-৭ বছরের জেল, অর্থদ- ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রাখা হয়েছে।