সাগরে ধরা পড়ছে রূপালি ইলিশ
ইমরান হোসাইন, (পাথরঘাটা) বরগুনা: বরগুনা জেলার পাথরঘাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ করে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহ ধরে গভীর সমুদ্র থেকে ইলিশবোঝাই ট্রলারগুলো দেশের দ্বিতীয় মাছ বাজার পাথরঘাটায় অসতে শুরু করছে। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে ফিরে আসা ইলিশভর্তি ট্রলারগুলো ঘাটে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের দেখা না পেলেও এখন কাঙ্খিত রূপালি ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুটে উঠেছে জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবীদের মাঝে। তাই স্বরূপ ফিরেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) পাথরঘাটা। জেলে, আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। সব মিলিয়ে যেন আনন্দের জোয়ার বইছে। অন্যদিকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বরফ কলের শ্রমিকরাও। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় উপূূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে স্বস্তি ফিরেছে। মাছভর্তি যান্ত্রিক নৌযান কিংবা মাছধরার (ফিশিং) ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে হাসি মুখে ফিরছেন। আবার অনেকে মাছ ধরার জন্য ছুটছেন সাগর পানে। তবে জলদস্যু আতঙ্কে অস্বস্তিও কম নেই জেলে পরিবারে। স্থানীয় জেলেদের ভাষ্য, চলতি বছরে ইলিশ মৌসুমের প্রথম ১ মাসে ইলিশের দেখা মেলেনি। তাই ট্রলার মালিকসহ মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত সবাই হতাশ হয়ে পড়ে ছিলেন। তবে সাগরে এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেপল্লীতে আনন্দের বাতাস বইছে। পাথরঘাটার টেংরা এলাকার ট্রলার শ্রমিক রিয়াজ হোসেন বলেন, ট্রলার সকালেই ঘাটে নোঙর করেছি। সব সময় এরকম মাছ জালে ধরা পড়ে না। তবে এবারে যে মাছ পেয়েছি, তাতে খুশি। এবার প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। ট্রলার মাঝি হাচান মিয়া বলেন, গত বছরের ন্যায়ে এবার ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। কয়েক দিন আগেও ইলিশ পাচ্ছিলেন না জেলেরা। তবে এখন আবার জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা জানান, চলতি বছর ইলিশ মৌসুমের শুরুতে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মেলেনি। তবে জুনের শেষের দিক থেকে থেকে গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে। আড়তের মালিক খান মো. হাবিব বলেন, সাগর থেকে যে কিছু ট্রলার ঘাটে আসছে, তাদের প্রতেকেই কম-বেশি মাছ পাচ্ছে। বিক্রি করেও ভালোই লাভ করছে তারা। ইলিশের দাম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। রবিবার (২৪জুন) গ্রেড অনুযায়ী মণ প্রতি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আ. রহমান নামের এক পাইকার জানান, ঢাকা, যশোর, মাগুরা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ মাছ পাঠান তিনি। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসা মাছ অনেক ভালো এবং এখান থেকে নানান জায়গায় মাছ পাঠানো সহজ। এ বছর পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় সব এলাকার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ চালান করতে পারছেন তিনি। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গত মাসের তুলনায় এখন অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। মাঝখানে তো একদম কমে গিয়েছিল। এখন আবার একটু বেড়েছে। বৃষ্টি হলে আরও ধরা পড়বে।