এই মণিহার আমায় নাহি সাজে নিজের পাওয়া সংবর্ধনা জনগণকে উৎসর্গ করলেন শেখ হাসিনা
আবুল বাশার নূরু: আওয়ামী লীগের দেওয়া গণসংবর্ধনা দেশবাসিকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরে বলেছেন, এই মনিহার আমায় নাহি সাজে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া এবং সর্বশেষ ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট ডিগ্রি অর্জনসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জনে অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি অভিনন্দনপত্র পড়ে শোনান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর আগে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের গান এবং সাদিয়া ইসলাম মৌ’র নির্দেশনায় নৃত্যনাট্যে ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশস্তি।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে শুরুতেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ মনিহার আমায় নাহি সাজে..।” তিনি বলেন, জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে সব থেকে বিবেচ্য বিষয়। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।
বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকা-ের পর ‘কঠিন পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে চলা ও দল গোছানো এবং বাংলার মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
দেশের মানুষের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল ঘুমের সময়টুকু বাদে দিনের বাকিটা সময় তিনি কেবলই দেশের উন্নয়ন ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা মানুষের তো ২৪ ঘণ্টা সময়। এই ২৪ ঘণ্টা থেকে আমি মাত্র ৫ ঘণ্টা নেই। আমার ঘুমানোর সময়। এছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত আমি কাজ করি দেশের মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। এর বাইরে আমার আর কোনও কাজ নেই। আমি কোনও উৎসবে যাই না। আমি কোথাও যাই না, কিচ্ছ করি না। সারাক্ষণ আমার একটাই চিন্ত, আমার দেশের উন্নয়ন, দেশের মানুষের উন্নয়ন। সারাক্ষণ চেষ্টা করি, কোথায় কোন মানুষটা কী অবস্থায় আছে, তার খোঁজখবর রাখতে।’
অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে ২০২০ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালনসহ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করবো। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’, ২০৪১ সালে আমরা সেই বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।
এ ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শুধু একটা জিনিস দেখতে চাই, এই বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ অবশ্যই আমরা গড়ে তুলবো। এই এগিয়ে চলার পথ আমরা যেন অব্যাহত রাখতে পারি।
এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
বিকালে এই অনুষ্ঠান হলেও এতে যোগ দিতে দুপুর থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জড়ো হতে থাকেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। বেলা সাড়ে ৩টার সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
রং-বেরংয়ের টুপি ও টি-শার্ট পরে এই সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। ঢাক-ঢোল বাঁজিয়ে মিছিল নিয়ে আসেন অনেকে।
ইংরেজি বর্ণ ‘এল’ আকৃতির বিশাল মঞ্চের সামনে ২০ হাজার চেয়ার বসানো হয়। তবে তাতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেকেই বসেন বাইরে।
মৎস্য ভবন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনার ভিআইপি গেইট পর্যন্ত ৪০টি তোরণ তৈরি করা হয় এই অনুষ্ঠান ঘিরে। তোরণগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও উন্নয়নের ছবি দিয়ে সাজানো। উদ্যানের মঞ্চের সামনের দিকে পশ্চিমপাশে করা হয় চিত্র প্রদর্শনী। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জনসহ শেখ হাসিনার অসংখ্য ছবি আঁকা ছিল।